চুল কেটে দেশজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছেন হেয়ার স্টাইলিস্ট জাভেদ হাবিব। তাঁর হেয়ার স্টাইলিং সেলুন চেইন দেশের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে। দিন কয়েক ধরেই খবরের শিরোনামে তিনি। এবার তাঁর নামে ২০টি এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বড়সড় জালিয়াতির মামলা হয়েছে।
সম্ভল পুলিশ এখনও পর্যন্ত জাভেদ হাবিব, তাঁর ছেলে আনাস হাবিব এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ২০টি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা কয়েক'শ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন। পুলিশ দিল্লি এবং মুম্বইতে তাদের বাসস্থানে অভিযান চালাবে। পরিবারের বিরুদ্ধে একটি লুকআউট নোটিশ জারি করা হয়েছে।
'স্টাইলিস কেলেঙ্কারি'র পরিকল্পনা
পুলিশ তদন্ত অনুসারে, এই পুরো মামলাটি বছর দুয়েক আগের। ২০২৩ সালে, সম্ভলের সরাইট্রেন এলাকার রয়েল প্যালেস ভেঙ্কট হলে জাঁকজমক করে অনুষ্ঠান একটি হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানটি FLC (Follicile Global Company) নামে আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি FLC (Follicile Global Company) নামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মঞ্চে জাভেদ হাবিব নিজে এবং তাঁর ছেলে আনাস হাবিব ছিলেন। হাভেদ হাবিব প্রায় ১৫০ জনকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, যদি তারা তার FLC কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে তারা ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ রিটার্ন পাবেন। অনেক মানুষ তাদের প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা দেন। নিশ্চিত লাভ, বিদেশি বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখানো হয়। ১০০ জনেরও বেশি লোক FLC কোম্পানিতে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা জমা করেছিলেন। বাইনান্স কয়েন এবং বিটকয়েনের নামে বিনিয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই কোম্পানিটি উধাও হয়ে যায়।
বিনিয়োগকারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান হয়, কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়
এক বছর কেটে যায়, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা কোনও লাভ পাননি। বিনিয়োগকারীরা বারবার কোম্পানির অফিস এবং হাবিবসের সেলুনে যেতে শুরু করে। অভিযোগ করা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা যখন তাদের টাকা ফেরত নেওয়ার দাবি করেন। তখন কোম্পানির স্থানীয় ইনচার্জ সাইফুল্লাহ তাদের এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায় এবং জাভেদ হাবিব তার পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান। সম্ভলে তাঁর নামে থাকা অফিসটি এখন তালাবন্ধ।
প্রাথমিকভাবে, কিছু প্রতারিত রায়সত্তি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। হিলাল, রেহান, আমান, মাজিদ হুসেন এবং মহম্মদ নঈম নামের বিনিয়োগকারীরা এফআইআরে বলেছেন, জাভেদ হাবিব বিশ্বব্যাপী হেয়ার কাটিং শিল্পের চেহারা বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছেন।
প্রাথমিক অভিযোগের পর, পুলিশ সুপার (এসপি) কে.কে. বিষ্ণোই ব্যক্তিগতভাবে রায়সত্তি থানা পরিদর্শন করেন এবং প্রতারিতদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করা হয়, তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা হবে। পরবর্তীকালে, পুলিশ জানায়, কমপক্ষে ১০০ জন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ১৯টি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জাভেদ হাবিব, তাঁর ছেলে আনাস হাবিব, তাঁর স্ত্রী এবং কোম্পানির প্রধান সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে মোট ২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রতারণা থেকে হুমকি
সম্ভল পুলিশ হাবিব পরিবারের বিরুদ্ধে ৪২০ (প্রতারণা) এবং ৫০৬ (অপরাধমূলক ভয় দেখানো) ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, কিছু বিনিয়োগকারী বিবৃতিতে বলেছেন, যখন তারা তাদের টাকা ফেরত দাবি করেছিল তখন তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের মতে, তারা সুসংগঠিত প্রতারণার জাল বিছিয়ে রাখে।
স্ত্রীর ভূমিকাও তদন্তাধীন
পুলিশ তদন্ত এখন নতুন মোড় নিয়েছে। প্রাথমিক তদবন্তে জানা গেছে, জাভেদ হাবিবের স্ত্রী এফএলসি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তালিকাভুক্ত। এর অর্থ হল পুরো জালিয়াতিটি পারিবারিক পর্যায়ে পরিকল্পিত ছিল। সম্ভল পুলিশ সন্দেহ করছে অভিযান শুরু হওয়ার সময় হাবিব পরিবার দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করা হয়েছে। এসপি বিষ্ণোইয়ের মতে, তার সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং সম্পত্তির তদন্ত শুরু করা হয়েছে।