কলেজের গার্ড রুমে ৩ ঘণ্টা ধরে চলে যৌন নির্যাতন। মরার ভান করে পড়ে থাকার পর প্রাণে রক্ষা পায় মেয়েটি। হাতেপায়ে ধরেও ছাড় পায়নি এমনই অভিযোগ। কসবা ল'কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় তোলপাড়। পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে একজন প্রাক্তন ছাত্রনেতা এবং দু'জন বর্তমান ছাত্র। এই তিনজনের পরিচয় কী? কেমন স্বভাবের ছিল তারা?
১. মনোজিত মিশ্র (মূল অভিযুক্ত)
মনোজিত সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। কলেজের ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমানে অস্থায়ী কর্মীও ছিল। বয়স- ৩১ বছর। একসময়ের ছাত্র রাজনীতির জনপ্রিয় মুখ মনোজিত মিশ্র। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার থেকে আসা মনোজিত এই কলেজ থেকে তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজনীতিতে প্রবেশ করে।
মনোজিত প্রায় এক দশক ধরে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং কলেজ ক্যাম্পাসে 'ক্ষমতার কেন্দ্র' হিসেবে পরিচিত ছিল। অতীতেও ইউনিয়ন বিরোধের সময় তার বিরুদ্ধে চাপ এবং হুমকির অভিযোগ উঠেছে। তবে তার বিরুদ্ধে পুলিশি কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। সূত্র জানায়, তৃণমূল দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি প্রায়শই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এড়িয়ে চলতেন।
তবে, পড়াশোনা শেষ করা সত্ত্বেও, তাকে নিয়মিত কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যেত। ছাত্রদের প্রভাবিত করতে থাকত। বর্তমানে, ২৬ জুন সন্ধে ৭টার দিকে মনোজিতকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, মনোজিতকে তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় শিশু উদ্যান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোনটিও জব্দ করা হয়েছে।
২. জইব আহমেদ (সহ-অভিযুক্ত)
সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বয়স ১৯ বছর।
তোপসিয়া এলাকার বাসিন্দা জইব একজন সাধারণ পরিবারের ছেলে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে ধীরে ধীরে ইউনিয়নে যোগ দেয়। সহপাঠীদের মতে, জইব শান্ত স্বভাবের। সহজেই প্রভাবিত হয়ে যায়। তার কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।তার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক সতর্কীকরণও নথিভুক্ত করা হয়নি। মনে করা হচ্ছে, ইউনিয়ন করতে গিয়েই মনোজিত মিশ্রের সঙ্গে তার দেখা হয়, যার ফলে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
তথ্য অনুযায়ী, মনোজিত মিশ্রের ঠিক ১৫ মিনিট পর, অর্থাৎ ২৬ জুন সন্ধে ৭টা ৩৫ মিনিটে, জইবকেও একই জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ তার মোবাইল ফোনও জব্দ করেছে।
৩. প্রমিত মুখোপাধ্যায় (সহ-অভিযুক্ত)
প্রমিতের বয়স ২০ বছর। অন্য দুই অভিযুক্তের তুলনায় প্রমিত কলেজ রাজনীতিতে অতটা সক্রিয় ছিল না। তবে সে ছাত্রদের একটি নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিল। নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার থেকে আসা প্রমিতকে তার বন্ধুরা 'শান্ত প্রকৃতির ছেলে' হিসেবেই চেনে। এই ঘটনার আগে তার কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না।
তবে বেশ কিছুদিন ধরে, তাদের প্রায়শই সন্ধেয় মনোজিত এবং জইবের সঙ্গে দেখা যেত। পুলিশ জানার চেষ্টা করছে, এই মামলায় তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল নাকি সে কোনও চাপ বা প্রভাবে জড়িয়ে পড়ে।
২৭ জুন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রমিতকে তার বাড়ি থেকে পুলিশ আটক করে। মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে এবং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।
তিন অভিযুক্তকেই পুলিশ রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে
তিন অভিযুক্তকেই ২৭ জুন আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়েছিল, যেখানে পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল। আদালত তিনজনকেই আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। কসবা থানা মামলাটির তদন্ত করছে। পুলিশ জানিয়েছে প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধস্থলের ফরেনসিক তদন্ত করা হবে। কলেজ ক্যাম্পাস সিল করে দেওয়া হয়েছে।