Advertisement

Kolkata Gangrape Case: 'আমার শরীরটা তোমার নয়, ওর পা ধরেছিলাম,' কসবার ছাত্রীর মর্মান্তিক বয়ান

গার্ডরুমে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। ছাত্রীটি কাঁদছিলেন, গার্ডের পা ধরেছিলেন, বারবার বলেছিলেন, 'আমার শরীরটা তোমার নয়, দয়া করে ছেড়ে দাও।' কিন্তু কিছুই শোনেনি মনোজিত ও তার দুই সঙ্গী।

কলকাতার কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণকলকাতার কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণ
Aajtak Bangla
  • কলকাতা ,
  • 27 Jun 2025,
  • अपडेटेड 3:38 PM IST
  • ‘তুমি আমার প্রস্তাব না মানলে, তোমার বয়ফ্রেন্ডকেও শেষ করে দেব’ 
  • 'আমি ওর পা ধরেছিলাম… ও ছাড়েনি,' বিবরণে শিউরে উঠছেন তদন্তকারীরাও
  • ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্তরা

কসবায় সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের ভিতরে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মনোজিত্‍ মিশ্র, জায়েব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়, তিনজনকে ইতিমধ্যেই পয়লা জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঘটনাটি ঘটে বুধবার সন্ধ্যায়। সেই দিন বাড়ি থেকে কলেজে বেরোনোর সময় ছাত্রীটি জানতেও পারেননি, তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন হতে চলেছে ২৫ জুন। পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করতে গিয়েছিলেন কলেজে, পুরনো পরিচিত কিছু মুখও দেখেছিলেন। কিন্তু কলেজেরই নিরাপত্তারক্ষীর ঘর যে তাঁর জীবনের ভয়ঙ্করতম দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে, তা কল্পনাতেও ছিল না।

ঘটনাস্থল? দক্ষিণ কলকাতার ল কলেজ। অভিযোগকারিণী? ওই কলেজেরই ছাত্রী, বয়স ২৪। অভিযুক্ত? কলেজেরই প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র। প্রধান অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র এখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক এবং কলেজের চুক্তিভিত্তিক কর্মীও।

‘তুমি আমার প্রস্তাব না মানলে, তোমার বয়ফ্রেন্ডকেও শেষ করে দেব’ 

পুলিশের কাছে ছাত্রী অভিযোগে জানিয়েছে, কলেজে ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই মনোজিত্‍ তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছাত্রী জানিয়ে দেন, তাঁর প্রেমিক আছে এবং তিনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। এরপরই মনোজিতের আচরণ পাল্টে যায়। অভিযোগ, কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে যাওয়ার রাস্তা আর থাকে না। গার্ডরুমে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। ছাত্রীটি কাঁদছিলেন, গার্ডের পা ধরেছিলেন, বারবার বলেছিলেন, 'আমার শরীরটা তোমার নয়, দয়া করে ছেড়ে দাও।' কিন্তু কিছুই শোনেনি মনোজিত ও তার দুই সঙ্গী।

'আমি ওর পা ধরেছিলাম… ও ছাড়েনি,' বিবরণে শিউরে উঠছেন তদন্তকারীরাও

ছাত্রী লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁকে জোর করে বিবস্ত্র করা হয়, গার্ডরুমে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। একজন নয়, একাধিক ব্যক্তি ছিল। তারা ভিডিও তোলে, হুমকি দেয় — 'যদি মুখ খোলো, এই ভিডিও ভাইরাল করে দেব। তোমার প্রেমিককে খুন করে ফেলব। তোমার পরিবারকে জেলে ভরব।' ঘটনার পর ছাত্রীটি বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। সাহস করে অভিযোগ দায়ের করেন কসবা থানায়।

Advertisement

গ্রেফতার তৃণমূল ছাত্রনেতা ও দুই সঙ্গী

অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ মনোজিত্‍ মিশ্র ও জয়েব আহমেদ নামে প্রথম বর্ষের ছাত্রকে তালবাগান ক্রসিং-এর কাছে গ্রেফতার করে। পরে ধরা পড়ে প্রমিত মুখোপাধ্যায় নামের আর এক ছাত্র। তিনজনের কাছ থেকেই মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেগুলি পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় অর্থাৎ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১০টা ৫০-এর মধ্যে পুরো ঘটনাটি ঘটে। কলেজ ক্যাম্পাসেই। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্তরা

আলিপুর আদালতে অভিযুক্তদের তোলা হলে সরকারি কৌঁসুলি জানান, প্রাথমিক মেডিক্যাল রিপোর্ট, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি এবং কলেজ চত্বরে ঘটা ঘটনাগুলি বিশ্লেষণ করে আদালত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, এই ধরনের অভিযোগে দ্রুত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত অত্যন্ত জরুরি। অন্যদিকে, অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবীর দাবি, 'ঘটনাটিকে অনেকে যেভাবে ব্যাখ্যা করছেন, তা বিভ্রান্তিকর। তদন্ত চলছে। এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যায় না।'

মহিলা কমিশনের তৎপরতা

ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই হস্তক্ষেপ করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, “এই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্যাতিতাকে অবিলম্বে আইনি, মানসিক ও চিকিৎসা সহায়তা দিতে হবে। BNSS-এর ৩৯৬ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণও দেওয়া উচিত।” তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন।

এই প্রতিবেদন কোনও কল্পনার ফল নয়। এটি দক্ষিণ কলকাতার এক তরুণীর বাস্তব অভিজ্ঞতা, যে সাহস করে নিজের উপর হওয়া নারকীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। এখন প্রশ্ন — এই শহরে, কলেজ চত্বরে, দিনের আলো ফুরিয়ে যাওয়ার পরে, কতটা নিরাপদ আমাদের মেয়েরা?

Read more!
Advertisement
Advertisement