কলকাতার বুকে দিনদুপুরে ট্যাক্সি থামিয়ে ২.৬৬ কোটি টাকা ছিনতাই! তাও আবার পুলিশকর্মীর মদতে। আর সেই ঘটনাতেই এবার গ্রেফতার হল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)-এর কনস্টেবল মিন্টু সরকার। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, গোটা পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ডই ছিল এই কনস্টেবল।
ঘটনাটি ঘটে ৫ মে, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। এস এন ব্যানার্জি রোড থেকে একটি বেসরকারি ফরেন এক্সচেঞ্জ সংস্থার দুই কর্মী একটি ট্যাক্সিতে করে যাচ্ছিলেন পার্ক সার্কাসের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে। তাঁদের সঙ্গে ছিল ২.৬৬ কোটি টাকা। কিন্তু কামারডাঙা মোড়ের কাছে আচমকা ট্যাক্সিটি থামিয়ে দেয় দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। জোর করে তারা গাড়িতে উঠে পড়ে, এবং কিছুদূর গিয়ে টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার পুলিশের কনস্টেবল
প্রথমদিকে মনে হয়েছিল এটা কোনও র্যান্ডম ছিনতাই। কিন্তু কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ যখন তদন্তে নামে, একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, এই ঘটনায় ভিতরের লোক জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তদন্তের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছেন ওই ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানির এক কর্মীও।
বুধবার ভোররাতে STF-এর কনস্টেবল মিন্টু সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক আধিকারিক বলেন, 'মিন্টু সরকারই পুরো ছক কষেছিল। ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানির কর্মীদের গতিবিধি, টাকার অঙ্ক, গন্তব্য—সবকিছুই তার জানা ছিল। সেই তথ্য দিয়েই লুটের পরিকল্পনা করে।'
তবে পুলিশ এখনই তদন্তের খাতিরে সব তথ্য প্রকাশ করতে চায়নি। কীভাবে বা কোথা থেকে সে গোটা পরিকল্পনাটি সাজিয়েছিল, কীভাবে অন্যদের জড়িয়েছিল, এসব খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা চলছে।
টাকাগুলি কোথায়?
সূত্রের খবর, এখনও পুরো টাকা উদ্ধার হয়নি। আংশিক পরিমাণ টাকা মিলেছে কয়েকজন অভিযুক্তের হেফাজত থেকে। বাকিটা লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে অনুমান। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে টাকা ও আরও সম্ভাব্য অভিযুক্তদের খোঁজে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় আছে, কার কাছে আছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
নাগরিকদের বিশ্বাসে ধাক্কা
এই ঘটনায় শহরজুড়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে পুলিশি শৃঙ্খলা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কনস্টেবল যদি এইভাবে ছক কষে ডাকাতির ঘটনা ঘটাতে পারেন, তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন? শুধু তাই নয়, দিনের আলোয়, খোদ কলকাতা শহরের বুকে এভাবে ট্যাক্সি থামিয়ে টাকা লুট—নগর নিরাপত্তা ব্যবস্থারও বড়সড় ফাঁকফোকর প্রকাশ্যে আনছে।
এবার নজরে পুলিশ-চক্র
তদন্তকারীরা মনে করছেন, মিন্টু সরকারের পাশাপাশি আরও পুলিশকর্মী বা প্রাক্তন পুলিশ সদস্য এই ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারেন। কারণ, এত বড় অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়া এবং লুটের পর আত্মগোপনে যাওয়ার জন্য ‘ইনসাইড’ হেল্প ছাড়া অসম্ভব।