একটি ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় এবার খোদ তদন্তকারী আধিকারিক এবং কসবা থানার ওসির বিরুদ্ধেই গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হলেন নিগৃহীতা তরুণী৷ কয়েক মাস আগে এক যুবকের বিরুদ্ধে কসবা থানায় একটি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। সেই অভিযোগের তদন্তে থানার এক সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার তদন্তকারী আধিকারিক এবং খোদ অফিসার ইনচার্জ ইচ্ছাকৃত ভাবে গাফিলতি করেছেন বলে আদালতে অভিযোগ নিগৃহীতার। শুধু তাই নয়, এই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্যপ্রমাণ পড়ে থাকা সত্ত্বেও, পুলিশ তা গ্রহণ করতে অনীহা দেখিয়েছে বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন কেটে গেলেও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে অভিযোগকারিণী পুলিশকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, পুলিশের তরফে কোনো রকম সাড়া মেলেনি বলেও অভিযোগ নিগৃহীতা তরুণীর। এবার তাই খোদ কসবা থানার ওসি সৈকত নিয়োগী এবং এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ চেয়ে আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিযোগকারিণী মহিলা।
কয়েক মাস আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযুক্তের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয় বলে দাবি। এরপর গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্যামাক স্ট্রিটের একটি পাবে গিয়ে মদ্যপান করার পর, ওই তরুণীকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নাম করে, জোর করে তার ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগকারিণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে কসবা থানার পুলিশ। অভিযোগ দায়ের করার ঠিক পরদিনই মূল অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতারও করা হয়। তারপরেও কেন পুলিশের বিরুদ্ধেই তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ?
অভিযোগকারিণীর আইনজীবী মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ধর্ষণের তদন্তের ক্ষেত্রে একটা স্ট্যান্ডার্ড ইনভেস্টিগেটিং প্রসেডিওর আছে। কসবা থানার পুলিশ তার তোয়াক্কা না করে বরং তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতেই বেশি ব্যাস্ত ছিল। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে তদন্তে নেমেই শুরুতে যেসব বাজেয়াপ্ত করা অনিবার্য তার মধ্যে অন্যতম হল নিগৃহীতার অন্তর্বাস। নিগৃহীতার মা পুলিশকে বারবার অনুরোধ করেছিল তার মেয়ের পরিহিত পোশাক সংগ্রহ করে তার নমুনা এবং রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে কিন্তু তাতে কান দেয়নি পুলিশ। তার বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। ক্রাইম সিন থেকে ফিরেন্সিক পরীক্ষা করে সংগ্রহ করা হয়নি অভিযুক্তের ফুটপৃন্ট বা ফিঙ্গারপ্রিন্টও। ফলে তদন্তে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে চূড়ান্ত গাফিলতি করেছে কসবা থানার পুলিশ"। এই অভিযোগ নিয়ে আগস্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নিগৃহীতা তরুণী। দু'পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করে মহামান্য হাইকোর্ট। তারপরেই এই মামলার তদন্তভার কসবা থানা থেকে স্থানান্তর করা হয় পাটুলি মহিলা থানায়। পুলিশ সূত্রে খবর, পাটুলি মহিলা থানার নতুন তদন্তকারী আধিকারিক এই তদন্তভার হাতে নিয়েই নিগৃহীতার বাড়ি থেকে সমস্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেন।
এখানেই কসবা থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিগৃহীতার পরিবার। আইনজীবী মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পাটুলি মহিলা থানার আইও যেগুলো সংগ্রহ করল, সেই একই কাজটা করতে কসবা থানার পুলিশ এতদিন বারবার বলা সত্ত্বেও কেন অনীহা দেখালো? আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস অন্য কোন স্বার্থে আসামি কে বাঁচাতে ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশ তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছিল। তাই আমার মক্কেল কসবা থানার ওসি এবং তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা রুজু করার নির্দেশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।" গত সোমবার এই মামলায় আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারক সুতীর্থ বন্দ্যোপাধ্যায় সিআরপিসি ১৫৬ (৩) ধারায় এফআইআর করার আর্জি খারিজ করলেও, নিগৃহীতার অভিযোগের কগনিজেন্স স্বীকার করে সিআরপিসি ২০০ ধারায় কম্প্লেন্ট কেস রুজু করার নির্দেশ দেন। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (এসএসডি) রশিদ মনির খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।