ধর্মতলার অনশনমঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন কর্মসূচি এখনও জারি রয়েছে, যদিও অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোকে গুরুতর শারীরিক অবস্থার কারণে বৃহস্পতিবার রাতেই আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আপাতত সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। বাকি ৬ অনশনকারী এখনও নিজেদের দাবির প্রতি অটল থেকে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে পাওয়া সর্বশেষ প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ছয় অনশনকারী ডাক্তারদের শরীরে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তবে তাঁদের মনোবল এখনও অটুট।
শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল
শুক্রবার সকালে অনশনরত ছয়জন জুনিয়র ডাক্তারদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের রক্তচাপ এবং পাল্স রেট পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, অনশনের কারণে সকলেরই রক্তচাপ কিছুটা কমেছে। বেশ কয়েকজনের পেশিতে টান ধরার মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও, মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথার সমস্যাও রয়েছে। তবে শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও অনশনকারীরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সংকল্পে অটল। এনআরএস হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্য বলেন, ‘‘দুর্বল বোধ করলেও এখন ঠিক আছি।’’
অনিকেতের শারীরিক অবস্থা
অনিকেত মাহাতোর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা বৃহস্পতিবারই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরপর অনশনমঞ্চ থেকে হুইল চেয়ারে করে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয় এবং দ্রুত আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। যদিও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, অনিকেতের মনোবল শক্ত রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি বাকি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁদের অনশন চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
অনশন শুরু ও আরজি করের ভূমিকা
শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই অনশন কর্মসূচিতে প্রথমে ছয়জন জুনিয়র ডাক্তার অংশ নেন। তবে আরজি কর হাসপাতালের কোনও প্রতিনিধির উপস্থিতি না থাকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। এর মধ্যেই রবিবার আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেন, এবং পরবর্তীতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
মুখ্যমন্ত্রীকে চিকিৎসক সংগঠনের ইমেল
এদিকে, চিকিৎসক সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি ইমেল পাঠিয়েছে। ইমেলটিতে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক পুণ্যব্রত গুণ এবং হীরালাল কোনার অনুরোধ করেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি যাতে প্রশাসনিক স্তরে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। তাঁরা সরকারকে এই অচলাবস্থা কাটাতে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। চিকিৎসকরা এই দাবিগুলিকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছেন।
সংকটের স্থিতি
জুনিয়র ডাক্তারদের এই অনশন কর্মসূচি একটি সঙ্কটের দিকে ইঙ্গিত করছে, যা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভের প্রতিফলন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকা এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারদের দাবি নিয়ে আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।