দুলাল সরকার খুনে দুই অভিযুক্তের হদিশ পেতে পুরস্কার ঘোষণা করল মালদা জেলা পুলিশ। তৃণমূল নেতা-কাউন্সিলর খুনে অন্যতম দুই অভিযুক্ত ইংরেজবাজারের রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহন এবং মহানন্দা পল্লির বাসিন্দা বাবলু যাদব। বর্তমানে দু'জনই পলাতক। সন্ধান পেতে এক-একজনের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। এদিকে এক অভিযুক্ত বাবলু যাদবের স্ত্রী বলছেন, তাঁর স্বামী 'সম্ভবত তৃণমূল করত।'
বাবলু যাদবে স্ত্রী সুচরিতা যাদবের দাবি, 'আমার স্বামী দুলাল সরকারের খুনের ঘটনায় জড়িত ভাবতেই অবাক লাগছে। ওঁর সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই। আমি যদি আগে টের পেতাম তাহলে ধরিয়ে দিতাম। ওঁর আসল বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জে। কিছুই করত না। তবে সম্ভবত তৃণমূল করত। কৃষ্ণ রজক(অপর অভিযুক্ত) মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে আসত। এক তারিখের পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। পুলিশ ২ জানুয়ারি আমাদের বাড়িতে এসেছিল।'
এই বাবলু যাদব ইংরেজবাজার পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। দুলাল সরকারের বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকেন।
এদিকে পুলিশি তদন্তের গতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকার। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, 'ই ঘটনায় আসল লোকেদের যাতে আড়াল না করা হয়। অতি দ্রুত এই ঘটনার সমাধান হোক। বড় মাথা তারা সামনে আসুক।'
মূল অভিযুক্তরা দ্রুত ধরা না পড়লে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিজে গিয়ে দেখা করবেন বলেও জানান চৈতালি। বলেন, 'আমি আর দু'দিন অপেক্ষা করবো। আমার স্বামীর কাজ মিটে যাওয়ার পর আমি সশরীরে গিয়ে দিদিকে জানাব সমস্তটা। সাধারণ মানুষ বা গ্রেপ্তার হওয়া এই ছেলেরা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না।' এর পিছনে 'বড় মাথা' রয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর।
দুলালচন্দ্র সরকার ওরফে বাবলা তৃণমূলের মালদা জেলা সহ-সভাপতি তথা ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ইংরেজবাজার শহরের ঝলঝলিয়ার কাছে নিজের প্লাইউড কারখানার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুলাল সরকার।
সেই সময় হঠাৎ বাইক চড়ে এসে দুই দুষ্কৃতী তাঁকে তাড়া করে গুলি করে। দোকানে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজে খুনের দৃশ্য ধরা পড়ে।
এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, 'এই ঘটনার কথা জেনে আমি দুঃখিত এবং হতবাক। অপরাধীদের দ্রুত ধরা উচিত।'
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুষ্কৃতীরা গত প্রায় ১০-১৫ দিন ধরেই দুলাল সরকারের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল। আর সেটা থেকেই তারা বুঝে গিয়েছিল যে, সকালে দুলাল সরকার একা থাকেন। সেই সময় তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা, ফ্যাক্টরীর কর্মীরা সঙ্গে থাকেন না। আর সেই কারণে সকালেই হামলার পরিকল্পনা করে তারা। কিন্তু এতদিন ধরে দুষ্কৃতীরা খুনের পরিকল্পনা নিয়ে নজরদারি চালাল, অথচ কেউ সেটা বুঝতে পারল না কেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতির তরজাও। বিরোধীদের একাংশ এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
সংবাদদাতাঃ মিল্টন পাল