বিয়েকে কেন্দ্র করে অনেক সময়ই অনেক ধরনের প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই এই ধরনের অভিযোগ সামনে আসে। এবার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন। উঠল বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ। এবারের ঘটনাটি ঘটেছে বাংলায়। ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে হাইপ্রোফাইল ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে তরুণীর সঙ্গে ৪৪ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ। গ্রেফতার প্রতারণা চক্রের মূল পান্ডা।
ম্যাট্রিমনি সাইটে হাই প্রোফাইল ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে হুগলির তরুণীর থেকে ৪৪ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ। ঘটনায় আগেই ২ জনকে গ্ৰেফতার করা হয়েছিল। এবার প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডাকে মন্দারমণির একটি রিসর্ট থেকে গ্ৰেফতার করল হুগলি জেলা গ্ৰামীণ পুলিশের সাইবার সেল। ধৃতের আসল নাম জামির আব্বাস। বাড়ি হুগলির খানাকুলে। গত জুলাই মাসে এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত দু'জন অভিযুক্তকে গ্ৰেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের একজন অভিষেক রায়, বাড়ি ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে। কলকাতার গড়িয়া এলাকাতেও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। অন্যজন জাহির আব্বাস। এরা দু'জনে প্রধান অভিযুক্ত জামির আব্বাসের ম্যানেজার হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা চক্র চালাত বলে অভিযোগ।
হুগলির কামারকুণ্ডুতে সাইবার ক্রাইম থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে হুগলি গ্রামীণ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার জানান, গত ২৬ মে হুগলির সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক তরুণী। ম্যাট্রিমনি সাইটে অনুপম রায় নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর বিয়ের প্রস্তাবের মাধ্যমে দু'পক্ষের সম্পর্ক নিবিড় হয়। ওই তরুণী ও তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে অভিযুক্ত জামির আব্বাস। নিজের নাম গোপন করে অনলাইনে অনুপম রায় পরিচয় দিয়ে প্রতরণা চালায় অভিযুক্ত।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অভিযুক্ত জামির আব্বাস তরুণীকে জানায় জিএসসি ও ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয়ে তার ব্যবসায়িক সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই কারণে তার সমস্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট সিল করে দেওয়া হয়েছে। কিছু অর্থের প্রয়োজন। টাকা দিলে তার সমস্ত অ্যাকাউন্ট ওপেন হয়ে যাবে। এই টোপ দিয়ে অভিযুক্ত ধাপে ধাপে মোট ৪৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় তরুণীর পরিবারের থেকে। এরপরেই অনলাইন সাইট থেকে অভিযুক্ত তার অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নেয় এবং তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে তরুণীর পরিবারের লোকজন হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের সাইবার থানায় গত ৬ মে অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরেই পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে নেমে প্রতারকদের ম্যানেজার হিসাবে পরিচয় দেওয়া অভিষেক রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিষেকের সূত্র ধরে গত ৯ মে গভীর রাতে হুগলীর খানাকুল থেকে জাহির আব্বাস নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত অধরা ছিল। এবার সেই অভিযুক্তকে মন্দারমণির একটি রিসর্ট থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৪ অক্টোবর তাকে চন্দননগর আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিয়ের নাম করে একাধিক তরুণীর সঙ্গে এই ধরনের সম্পর্ক তৈরি করে পরিবারের বিশ্বাস অর্জনের পর লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করত বলে অভিযোগ। পাশাপাশি এই ঘটনায় আরও কারা কারা যুক্ত রয়েছে, কতদিন ধরে তারা এই প্রতারণা চক্র চালাচ্ছে, সবটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।