নিজের মেয়েকে গুলি করে খুন করলেন বাবা। গুরগাঁওয়ের ঘটনা রীতিমতো 'শকিং'। অভিযোগ, জাতীয় স্তরের টেনিস প্লেয়ার রাধিকা যাদবকে একাধিক গুলি করেন তাঁর বাবা দীপক যাদব। গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৭-এর বাড়িতে সকালবেলা রান্না করার সময় তাঁকে পিছন থেকে গুলি করা হয়। মায়ের জন্মদিনের জন্য কিছু তৈরি করছিলেন রাধিকা। তখনই এই ভয়ঙ্কর ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হল, একজন বাবা এমনটা কেন করলেন? কেন অন্যের কথা শুনে মেয়ের জীবন শেষ করে দিলেন?
‘মেয়ের টাকায় খায়’, এই অপবাদই কি খুনের কারণ?
পুলিশকে দেওয়া বয়ানে দীপক যাদব দাবি করেছেন, রাধিকাকে নিয়ে গ্রামের মানুষজন নানা কটূক্তি করত। দিন দিন তা বেড়েই চলেছিল। আর তা কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। তাঁর দাবি, কেউ বলত, দীপক মেয়ের রোজগারে বেঁচে আছেন। কেউ আবার রাধিকার চরিত্র নিয়ে নানা গুজব ছড়াত। দীপকের দাবি, মেয়ের কারণে তাঁর অসম্মান, অপমানবোধ হচ্ছিল।
রাধিকা সফল টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। নিজের টেনিস অ্যাকাডেমি চালাতেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। সম্প্রতি এক মিউজিক ভিডিও ‘করওয়ান’-এও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। এই সমস্ত কিছুতেই দীপকের আপত্তি ছিল। বারবার তিনি মেয়েকে অ্যাকাডেমি বন্ধ করতে বলতেন তিনি। কেরিয়ারমুখী ও স্পোর্টস-লাভার রাধিকা তাতে রাজি হননি।
স্ত্রীর জন্মদিনের সকালেই মেয়েকে চার রাউন্ড গুলি
১০ জুলাই রাধিকার মা মঞ্জু যাদবের জন্মদিন ছিল। সকালে নিজের হাতে মায়ের জন্য স্পেশাল কিছু বানাচ্ছিল রাধিকা। আর তখনই রান্নাঘরে হাজির হয় দীপক। গুলি চালান পরপর। প্রথমে বলা হয়েছিল, তিন রাউন্ড গুলি পেছন দিক থেকে চালানো হয়। কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উঠে আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি। সরকারি সার্জেন জানিয়েছেন, চারটি গুলি রাধিকার বুকে লেগেছে। সরাসরি সামনের দিক থেকে চালানো হয়েছে গুলি।
মা কিছু জানতেন না?
ঘটনার সময় মা মঞ্জু যাদব অসুস্থ ছিলেন বলে জানিয়েছেন। জ্বর থাকায় ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পুলিশ বারবার জিজ্ঞাসা করলেও তিনি কোনও লিখিত বয়ান দেননি। এমনকী বলেন, ‘আমি জানি না দীপক কেন এমনটা করল।’
তদন্তে মিলছে নানা অসঙ্গতি, একাধিক প্রশ্ন
এই ঘটনার পর পুলিশের এফআইআর এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্টের মধ্যে বড়সড় অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। একদিকে বলা হচ্ছে, গুলি পেছন থেকে চালানো হয়েছে। অন্যদিকে মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে, গুলি সামনের দিক থেকেও চালানো হয়। তাহলে সত্যিটা কী? ঘটনার সময় দীপক রাধিকার মুখোমুখি হয়ে গুলি চালিয়েছিলেন? না কি এর পেছনে অন্য কোনও বড় চক্রান্ত রয়েছে?
তবে কি একজন নারীর সাফল্য, আত্মনির্ভরতা ও খ্যাতিই কি তাকে নিজের বাবার চোখে শত্রুতে পরিণত করল? রাধিকা যাদবের মৃত্যুতে উঠছে সেই প্রশ্ন। একইসঙ্গে আরও একবার সমাজের প্রকৃত চিত্রটা উঠে এল। আজও যে সমাজের একটি বড় অংশ মেয়েদের এগিয়ে চলাকে মেনে নিতে পারে না, তাও প্রমাণিত হল। তবে রাধিকা যাদবের বাবা যে দাবিগুলি করেছেন, তা আদৌ কতটা সত্য? আগামিদিনে তদন্তে কি উঠে আসে, সেটাই দেখার।