বিহার ভোটের সময় সকলকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলেছিল এনডিএ শিবির। এরপর মধ্যপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্য সেই ঘোষণা করে। প্রত্যেক ভারত বাসীকে ভ্যাকসিনের কথা বলতে শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকেও। কিন্তু এবার অন্যকথা শোনা যাচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কন্ঠে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, সকলকে ভ্যাকসিন দেওয়ার দরকার নেই। সরকারি সহায়তায় তাদেরকেই ভ্যাকসিন দেওযা হবে যাঁরা ঝুঁকিমূলক অবস্থায় রয়েছেন। অন্য সুস্থ ব্যক্তিদের টিকা কিনে নিতে হবে।
পুরো দেশে করোনা ভ্যাকসিন দিতে কত সময় লাগবে? এই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বলেন, 'পুরো দেশকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, এমন কথা কেন্দ্রীয় সরকার কোনও দিন বলেনি!' তাঁর কথায়, 'বৈজ্ঞানিক বিষয়ে তথ্যের উপর ভিত্তি করেই এগোনো উচিৎ। এ এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে তথ্যনির্ভর আলোচনা হোক।'
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গবও। তিনি বলেন , প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর যদি সংক্রমণের শৃঙ্খল ভঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে বাকি জনগণকে টিকা দেওয়ার প্রয়োজনই নেই।
এর আগে শোনা গিয়েছিল আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ২৫-৩০ কোটি মানুষকে করোনা টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে আছে প্রায় ৩ কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্যরা যাদের বাড়িতে থেকে কাজের উপায় নেই। সেই জন্য প্রায় ৫০-৬০ কোটি কোভিড ডোজ যোগাড় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই সংক্রান্ত ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে কেন্দ্রের। আগামী বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকেই করোনা টিকা আসতে চলেছে। প্রাথমিক ভাবে আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য করোনা টিকার ছাড় মিলবে। তৃতীয় পর্যায়ের ডেটা পুরো বিশ্লেষণ করার পর মিলবে বাজারে বিক্রির অনুমতি।
এখনও পর্যন্ত ঠিক করা হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী সহ যাবতীয় কোভিড যোদ্ধা, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের এবং অন্যান্য যাদের কঠিন অসুখ আছে তাদের আগে দেওয়া হবে টিকা। টিকাকরণের কাজ দেখভাল করার জন্য রাজ্যদের কমিটি বানাতে বলেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্যসচিব রাজ্যদের জেলাওয়াড়ি কমিটি তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার জন্য।
গত শনিবারই দেশের ৩ শহরের তিনটি ল্যাব ঘুরে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই তিনটি পৃথক কোম্পানি তৈরি করছে করোনা ভ্যাকসিন। সোমবার ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী টিমের সঙ্গে ভিডিয়ো কন্ফারেন্স কথা বলবেন নরেন্দ্র মোদী।
এমন আবহে আগামী ৪ ডিসেম্বর সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। সব দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদী। করোনা পরিস্থিতি ও সেইসঙ্গে ভ্য়াকসিন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হতে পারে সর্বদল বৈঠকে।
দেশে করোনার দৌরাত্ম্য় কমার লক্ষণই নেই। রোজই ভাইরাসের দাপট বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ভ্য়াকসিনের দিকেই তাকিয়ে আসমুদ্রহিমাচল। কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিবের কথায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেল।