দিল্লি পুলিশের অভিযানে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিশাল নেটওয়ার্ক ধরা পড়ল। দেশের রাজধানীতে অবৈধভাবে বসবাস করা ৯২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১৪২ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত করতে এবং তাঁদের গ্রেফতারের জন্য ১০ দিনের বিশেষ অভিযান চালায় দিল্লি পুলিশ।
গোপন সূত্র ও স্থানীয় পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চলে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালায়। দক্ষিণ-পশ্চিম জেলার ডেপুটি কমিশনার সুরেন্দ্র চৌধুরী জানান, সরোজিনী নগর, কিশনগড়, সাফদরজং এনক্লেভ, বসন্তকুঞ্জ, কাপাসহেরা, পালম গ্রাম, দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট ও সাগরপুর – এই এলাকাগুলি থেকে মোট ৮৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
ধৃতরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভারতে থাকার কোনও বৈধ নথি দেখাতে পারেননি। অনেকের কাছে বাংলাদেশি পরিচয়পত্রও পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের আইনি প্রক্রিয়ার জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা স্বীকার করেছে যে তারা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে। কেউ নদী পার হয়ে এসেছে, কেউ সীমান্তের কাঁটাতার কেটে ঢুকেছে। এদের অনেকেই বহু বছর ধরে দিল্লিতে থেকে দিনমজুরি ও গৃহকর্মীর কাজ করছিল। দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চল থেকে এক বাঙলাদেশি দম্পতি এবং তাদের দুই নাবালক সন্তানকেও ধরা হয়েছে। তারা গত ১২ বছর ধরে ওই এলাকায় অবৈধভাবে বাস করছিল।
ধৃতদের নাম— মহম্মদ আসাদ আলি (৪৪), তাঁর স্ত্রী নাসিমা বেগম (৪০), ছেলে মহম্মদ নাঈম খান (১৮) ও মেয়ে আশা মণি (১৩)। কেউই ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধ নথি দেখাতে পারেননি। তাঁরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা বাঙলাদেশের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি এলাকার ফরুক বাজার আজওয়াতারির বাসিন্দা। পরিবারের বিবৃতি নেওয়া হয়েছে এবং এফআরআরও-র মাধ্যমে নির্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে দিল্লি পুলিশ এমন এক চক্রের হদিশ পায়, যারা দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করাচ্ছিল। চক্রের মাথা ৫৫ বছর বয়সি চাঁদ মিঞা। সে চার বছর বয়সে ভারতে প্রবেশ করে। পুলিশ তার সঙ্গে আরও ছয়জন বাঙলাদেশি ও পাঁচজন ভারতীয় সহযোগীকেও গ্রেফতার করে। তারা ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে অনুপ্রবেশকারীদের দীর্ঘদিন থাকার ব্যবস্থা করত।
দক্ষিণ-পূর্ব জেলার ডেপুটি কমিশনার রবি কুমার সিং জানান, চাঁদ মিঞার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চেন্নাই থেকে আরও ৩৩ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে ধরা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে ১০০-র বেশি বাঙলাদেশি নাগরিক ও এজেন্ট জড়িত এবং তাঁরা বর্তমানে তদন্তের আওতায় রয়েছেন। চাঁদ মিঞা ছাড়াও ধৃত অন্য বাংলাদেশিদের নাম— আসলাম (২৫), মহম্মদ আলি হুসেন (২৮), মহম্মদ মিজান (২৫), রেদিশ মোল্লা (২৪) এবং ফাতিমা আফরোজ (৩২)।