প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ফ্রান্সের থেকে ২৬টি রাফাল-এম যুদ্ধবিমানের চুক্তি করবে ভারত। ইতিমধ্যেই বিমান কেনায় অনুমোদন দিয়েছে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি। ৬৩ হাজার কোটি টাকার এই চুক্তিতে ভারত ফ্রান্স থেকে ২২টি সিঙ্গল সিটার এবং ৪টি ডাবল সিটার যুদ্ধবিমান কিনবে। প্রশিক্ষণের জন্য ডাবল সটার যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হবে। এটি সমগ্র ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনবে। নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি পাবে। রাফাল মেরিন ফাইটার জেট (রাফাল এম) ভারতীয় বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্যে মোতায়েন করা হবে।
এটা কী ধরনের চুক্তি হবে?
দক্ষিণ এশিয়ার কথা বলতে গেলে, ভারত ও চিন ছাড়া অন্য কোনও দেশের কাছে বিমানবাহী জাহাজ নেই। এই বিমান নৌসেনার হাতে এলে চিন ও পাকিস্তান সহ ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয়ে যাবে। এই চুক্তি ভারতের মেক ইন ইন্ডিয়া প্রচারকেও উৎসাহিত করবে। চুক্তিতে একটি প্যাকেজ আছে। এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ এবং সরবরাহ সহায়তাও অন্তর্ভুক্ত। নৌবাহিনীর কর্মীদের প্রশিক্ষণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রশিক্ষণও অন্তর্ভুক্ত। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে, ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরীতে নতুন এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান থাকবে।
রাফাল-এম যুদ্ধবিমানটি কেমন?
রাফাল-এম ৫০.১ ফুট লম্বা। এটি এক বা দুজন পাইলট ওড়াতে পারেন। রাফালের ওজন মাত্র ১৫ হাজার কেজি। তার মানে এটা হালকা। রাফাল-এম এর জ্বালানি ধারণক্ষমতা প্রায় ১১,২০২ কেজি। এর মানে হল এটি আরও বেশি সময় ধরে উড়তে পারে। গতিবেগ ২২০৫ কিমি/ঘণ্টা। রাফাল-এম এর পাল্লা ৩৭০০ কিমি। ৫২ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। রাফাল-এম একটি ৩০ মিমি অটোক্যানন বন্দুক দিয়ে সজ্জিত। এছাড়াও ১৪টি হার্ডপয়েন্ট আছে। এটিতে তিন ধরনের এয়ার টু এয়ার মিসাইল, সাত ধরনের এয়ার টু সারফেস মিসাইল, একটি পারমাণবিক মিসাইল অথবা এগুলির সংমিশ্রণ লাগানো যেতে পারে।
এর AESA রাডার টার্গেট নাক্তকরণ এবং ট্র্যাকিংয়ের জন্য চমৎকার। এতে স্পেকট্রা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম রয়েছে, যা এটিকে স্টিলথ করে তোলে। এই বিমানে আকাশেই জ্বালানি ভরে নেওয়া যাবে। তার মানে এর পরিসর বাড়বে। রাফাল-এম যুদ্ধবিমানের আগমনের ফলে ভারতীয় সামুদ্রিক অঞ্চলে নজরদারি, গুপ্তচরবৃত্তি, আক্রমণ ইত্যাদি অনেক মিশন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এই ফাইটার জেটটি জাহাজ-বিরোধী যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে ভাল। এতে প্রিসিশন গাইডেড বোমা এবং মিসাইল লাগানোযেতে পারে। যেমন মেটিওর অথবা এক্সোস্যাট।
এই জেটটি ভারতের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
দক্ষিণ এশিয়ার কথা বলতে গেলে, ভারত ও চিন ছাড়া অন্য কোনও দেশের কাছে বিমানবাহী জাহাজ নেই। চিনের বিমানবাহী রণতরীতে তিন ধরনের যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে। প্রথম জে-১০, দ্বিতীয় জে-১৫ এবং তৃতীয় সুখোই-৩০।
তিনটির সঙ্গে রাফালের তুলনা বুঝুন
J-10 জেটটি ৫৫.৫ ফুট লম্বা, J-15 জেটটি ৭৩.১ ফুট লম্বা এবং Sukhoi-30 জেটটি ৭২ ফুট লম্বা। যেখানে রাফাল-এম ৫০.১ ফুট লম্বা। অর্থাৎ আকারে সবচেয়ে ছোট। চিনের J-10 যুদ্ধবিমান একজন পাইলট, J-15 একজন বা দু'জন পাইলট এবং Sukhoi-30 দু'জন পাইলট ওড়াতে পারেন। অন্যদিকে রাফাল ১ বা ২ জন পাইলট ওড়ান। J-10-র মোট ওজন ১৪ হাজার কেজি, J-15-র ২৭ হাজার কেজি এবং Sukhoi-30-র ২৪,৯০০ কেজি। অথচ রাফালের ওজন মাত্র ১৫ হাজার কেজি। তার মানে এটা হালকা।
চিনের J-10 এর উড়ান ক্ষমতা সর্বোচ্চ, যার অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ক্ষমতা ৮৯৫০ লিটার। J-15 এর জ্বালানি ধারণক্ষমতা ৯৫০০ লিটার এবং Sukhoi-30 যুদ্ধবিমানের জ্বালানি ধারণক্ষমতা ৯৪০০ লিটার। রাফাল-এম এর জ্বালানি ধারণক্ষমতা প্রায় ১১,২০২ কেজি। এর মানে হল এটি সমস্ত যুদ্ধবিমানের চেয়ে বেশি সময় ধরে উড়তে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ডগ ফাইট চালাতে পারে।
J-10 এর সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ২২০৫ কিলোমিটার। J-15 এর সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ২৯৬৩ কিলোমিটার। সুখোই-৩০ এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২১২০ কিলোমিটার। যেখানে, রাফাল-এম-র সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২২০৫ কিলোমিটার। তার মানে এটি J-15 এর চেয়ে দুর্বল, কিন্তু সুখোই এর চেয়ে ভাল এবং J-10 এর সমান।