দেশবিরোধী কাজ ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআই যোগের অভিযোগে গ্রেফতার ভারতের জনপ্রিয় ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা। তিনি 'ট্র্যাভেল উইথ জো' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান এবং পাকিস্তান সফরের সময় তিনি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর এজেন্টদের সংস্পর্শে আসেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
তথ্য অনুযায়ী, জ্যোতি মালহোত্রা ২০২৩ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। কমিশনের মাধ্যমে ভিসা নিয়ে তিনি এই ভ্রমণ করেছিলেন। এই সময় জ্যোতির সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মচারী এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের দেখা হয়, যার সঙ্গে জ্যোতির গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দানিশের মাধ্যমে জ্যোতির সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-র অন্যান্য এজেন্টদের পরিচয় হয়, যাদের মধ্যে ছিলেন আলি আহসান এবং শাকির ওরফে রানা শাহবাজ (যার নাম তিনি তাঁর ফোনে 'জট রানধাওয়া' হিসেবে সেভ করেছিলেন)।
জ্যোতি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো এনক্রিপ্টেড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবল পাকিস্তানের পক্ষে ইতিবাচক ভাবমূর্তি পোস্ট করতেন। শুধু তাই নয় বরং সংবেদনশীল তথ্যও শেয়ার করছিলেন। তদন্তে এটাও জানা গিয়েছে যে জ্যোতির একজন পাকিস্তানি গোয়েন্দা এজেন্টের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে গিয়েছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার এবং গুপ্তচরবৃত্তির জন্য পাকিস্তান সোশ্যাল মিডিয়ায় জ্যোতির উপস্থিতি এবং প্রভাব ব্যবহার করছিল।
ভারত সরকার ১৩ মে দানিশকে 'অবাঞ্ছিত ব্যক্তি' ঘোষণা করে এবং তাঁকে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে জ্যোতি মালহোত্রার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (BNS) ধারা ১৫২ এবং ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ধারা ৩, ৪ এবং ৫ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাঁর লিখিত স্বীকারোক্তিও রেকর্ড করা হয়েছে। এখন এই মামলার তদন্ত হিসারের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গুপ্তচর নেটওয়ার্কের বড় খোলাসা
এই মামলাটি কেবল জ্যোতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বড় নেটওয়ার্কের উন্মোচন করেছে, যার মধ্যে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার অনেক জেলার মানুষ রয়েছে। এই সমস্ত অভিযুক্তরা হয় পাকিস্তানি এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল অথবা তাদের জন্য আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছিল। এই মামলায় পাঞ্জাবের মালেরকোটলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে ৩২ বছর বয়সের ঘাজালা, যিনি দানিশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়িত ছিলেন এবং ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছিলেন। এছাড়াও, ইয়ামিন মহম্মদকেও পাকড়াও করা হয়েছে, যিনি দানিশকে হাওলা এবং অন্যান্য মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে সাহায্য করতেন। হরিয়ানার কৈথল থেকে দেবিন্দর সিং ধিলনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাকিস্তান সফরের সময় তিনি পাতিয়ালা ক্যান্টনমেন্টের ভিডিও পাকিস্তানি এজেন্টদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।
এছাড়াও, হরিয়ানার নুহ থেকে আরমান নামে এক স্থানীয় মুসলিম যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যে পাকিস্তানি এজেন্টদের নির্দেশে ভারতীয় সিম কার্ড সরবরাহ করেছিল এবং ডিফেন্স এক্সপো ২০২৫-এর স্থান পরিদর্শন করেছিল।