হাতির হামলায় মৃত এক গ্রামবাসীর পরিবারের জন্য ৬ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে সরকার। আর সেই সাহায্যের টাকা নিতে ৬ জন নিজেদের নিহতের স্ত্রী হিসেবে দাবি করলেন। আজব এই ঘটনা ছত্তিশগড়ের জশপুর জেলার।
জশপুর জেলার পত্থলগ্রাম বনাঞ্চল এলাকার মধ্যে অবস্থিত বালাঝাল চিমটিপাণি গ্রামের বাসিন্দা সালিক রাম টোপ্পো গত ২৬ জুলাই ভুলবশত গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিলেন। একটি হাতি তাঁর উপর হামলা করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সালিক রাম টোপ্পোর। মৃত্যুর পর সরকার ওই ব্যক্তির পরিবারকে ৬ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করে। আর তাতেই ঘটল বিপত্তি। সাহায্যের সেই বিপুল অঙ্কের টাকা নিতে পৌঁছে যান একজন নয়, ৬ জন মহিলা। সকলেই নিজেদের সালিক রাম টোপ্পোর পত্নী বলে দাবি করেন।
সুগন্ধী বাই, বুধিয়ারো বাই, সঙ্গীতা বাই, শিলা বাই, অনীতা বাই এবং মীনা বাই। ৬ জনেরই দাবি, তিনিই মৃতের আসল পত্নী। প্রত্যেকেই ৬ লক্ষ সাহায্যের অর্থ দাবি করে বসেন। ঘটনা হতভম্ব হয়ে পড়েন সরকারি আধিকারিকরা। এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকেন।
বিভ্রান্তি চরমে ওঠে যখন ৬ জনের মধ্যে ২ জন পঞ্চায়েতের প্রমাণপত্র দেখান। বাকি ৪ জন অবশ্য তখনও তর্ক করে চলেছিলেন সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে।
বুধিয়ারো বাই এবং তাঁর ছেলে ভগবানের বক্তব্য, তাঁরা সালিক রাম টোপ্পোর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও সৎ ছেলে। সালিক রামের শেষকৃত্যে তাঁরাই উপস্থিত ছিলেন বলেও দাবি করেন এই দু'জন। অন্যদিকে, বাকিরাও নিজেদের নিজেদের মতো করে সম্পর্কের খতিয়ান তুলে ধরতে শুরু করে।
ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। তার মাঝেই রেঞ্জার কৃপাসিন্ধু প্যাকরা বলেন, 'আমাদের কাছে ৬ জন মহিলা এসে নজেদের মৃতের স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন। তবে আমরা তাঁকেই মাণ্যতা দেব যাঁর কাছে নিহতের নিকটবর্তী পঞ্চায়েতের বৈধ প্রমাণপত্র পাওয়া যাবে।' গ্রাম পঞ্চায়েত বালাঝাড়ের প্রধান হরিনাথ দিওযান বলেন, 'পঞ্চায়েত থেকে সালিক রাম টোপ্পোর স্ত্রী বুধিয়ারো বাই এবং তাঁর ছেলে ভগবানের নাম নথি তৈরি করে বন বিভাগে পাঠানো হয়েছে কিন্তু এখন তো দেখছি আরও মহিলারাও নিজেদের নিহতের স্ত্রী বলে দাবি করছেন।'
বিভ্রান্তির মাঝে নিজেকে নিহতের আসল ছেলে হিসেবে দাবি করা ভগবান আরও এক তথ্য ফাঁস করেন। তাঁর বক্তব্য, 'বুধিয়ারো বাই আমার সৎ মা। আমার আসল মা সুগন্ধী বাই। ছেলেবেলায় মা ছেড়ে চলে গিয়েছিল।' বুধিয়ারো বাইয়ের দাবি, 'গত ২০ বছর ধরে আমি সালিক রাম টোপ্পোর সঙ্গে ঘর করেছি। শেষকৃত্যেও ছিলাম। ফলে এই আর্থিক সাহায্য আমারই প্রাপ্য।'
দীর্ঘদিন কেটে গেলেও এখনও এই আজব সমস্যার কোনও সমাধান পায়নি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বন বিভাগ। আপাতত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখে, সমস্ত প্রমাণ মিললে তবেই বোঝা যাবে হাতির হানায় মৃত সালিক রাম টোপ্পোর আসল স্ত্রী কে। ততক্ষণ ৬ লক্ষ টাকার আশায় ৬ মহিলা।