হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার সিয়াথি গ্রামে গত ২৬ জুন গভীর রাতে ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা। একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে গ্রামে নামে বিশাল ভূমিধস। কিন্তু এক পোষ্য কুকুরের সতর্কতা এবং তার মালিকের দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ এই বিপর্যয়ের মধ্যে বাঁচিয়ে দেয় ৬৩ জন গ্রামবাসীকে।
রাত প্রায় ১২:৩০টা থেকে ১:০০টার মধ্যে গ্রামের একটি বাড়ির নীচতলায় ঘুমিয়ে ছিল পাঁচ মাসের কুকুর রকি। হঠাৎ সে অস্বাভাবিকভাবে ঘেউ ঘেউ করে ডাকতে শুরু করে, যেন কোনও আশঙ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার মালিক ললিত কুমার ঘুম ভেঙে গিয়ে রকির ডাকে সাড়া দেন এবং দেখেন, তাদের বাড়ির একটি দেয়ালে বড় ফাটল ধরেছে, সেখান দিয়ে জল ঢুকছে।
রকির সতর্কতায় সময় নষ্ট না করে ললিত কুমার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটিকে কোলে তুলে নেন এবং বাড়ির বাইরে এসে গ্রামবাসীদের জাগাতে শুরু করেন। তিনি নিজের চোখে দেখতে পান, কীভাবে পাহাড় থেকে ভূমিধস নামছে এবং জলপ্লাবন গ্রাম লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে।
তিনি ২২টি পরিবারকে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেন। তার তৎপরতায় সবাই প্রাণে বাঁচে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল এক ভূমিধস গ্রামে আছড়ে পড়ে, বহু বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়, কিছু সম্পূর্ণ চাপা পড়ে যায় ধ্বংসস্তূপের নিচে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, রকি-র ঘেউঘেউ এবং ললিতের তৎপরতায় কেউই আহত হননি। প্রাণে বেঁচে যান সবাই। যদিও শেষপর্যন্ত কুকুরটি নিজেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে যায়, পরে তাকে উদ্ধার করতে হয়। গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান দেশরাজ বলেন, 'এই কুকুরটির কারণেই আমরা আজ বেঁচে আছি। প্রকৃতপক্ষে ও আমাদের রক্ষা করেছে।'
বর্তমানে গ্রামবাসীরা কাছাকাছি ত্রিয়াম্বালা গ্রামের নৈনা দেবী মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকার দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০,০০০ টাকা করে তাৎক্ষণিক ত্রাণ দিয়েছে। রকি এখন গ্রামবাসীদের চোখে নায়ক, আর এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ হল। সতর্কতা ও সচেতনতাই যে কোনও বিপর্যয়ে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।