Sikkim Lake Shako Cho: মেঘ ভাঙা বৃষ্টি আর তার জেরে লোনক হ্রদ ভেঙে জল উপচে হড়পান বানে বিপর্যস্ত সিকিম। কয়েকদিন কেটে গেলেও এখনও সেই আতঙ্ক থেকে বের হতে পারেনি সাধারণ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি মেরামতি হতে তো বছর পার হয়ে যাবে। রাজ্যের চুংথাংয়ের দক্ষিণ লোনাক হ্রদের বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে তিস্তা নদীতে। পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এরই মধ্যে নতুন করে আরও একটি বিপর্যয় ঘনিয়ে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিকিমেরই আরও একটি হ্রদকে ঘিরে। হ্রদটিক নাম ‘সাকো চো’ নামে সেই হ্রদটিও নাকি ভাঙতে পারে যে কোনও সময়। জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। ফলে নতুন করে বিপদের আশঙ্কায় থরহরিকম্প সে রাজ্যের মানুষ ও প্রশাসন।
কোথায় এই সাকো চো হ্রদ?
উত্তর সিকিমের ১৬ হাজার ৪০৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ‘সাকো চো’ লেক। দক্ষিণ লোনাকের চেয়ে আয়তনে কম হলেও, গভীরতা অনেক বেশি। গত কয়েকদিনে সেটির জলস্তর প্রায় ৬ মিটার বেড়েছে। তাই অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ৫৯৪ ফুট গভীর ‘সাকো চো’র ওপরে রয়েছে এক হাজার মিটার উচ্চতার একটি হিমবাহ। উষ্ণায়নের কারণে সেই হিমবাহে ভাঙন ধরেছে। বরফগলা জলে হ্রদের গভীরতা আরও বেড়েছে। জানা গিয়েছে, মঙ্গন জেলার এই হ্রদটি জলের চাপে যে কোনও মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে। ফলে ফের ‘গ্লেসিয়ার লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’ (গ্লফ) হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিপদ এড়াতে লেক থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে লাচেন উপত্যকার থাঙ্গু, চেলা ও ইয়াথাং গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খালি করে দেওয়া হয়েছে গ্যাংটক জেলার সিংতামের গোলিতার, মঙ্গনের ডিকচু এবং পাকিয়ংয়ের রংপো আইবিএম এলাকা। যদিও সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
কী হবে এই হ্রদ ভেঙে গেলে?
এই হিমবাহ হ্রদ ফেটে গেলে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স পর্যন্ত অংশ ভেসে যেতে পারে। কারণ, আচমকা হড়পা বানে জলস্ফীতি হলে ছাপিয়ে যাবে ডুয়ার্সের নদীগুলি। ডুয়ার্সে যদি বন্যা হয়, তা আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিকিম প্রশাসন সূত্রেই খবর, হ্রদ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে লাচেন উপত্যকার থাঙ্গু, চেলা ও ইয়াথাংয়ের গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খালি করে দেওয়া হয়েছে গ্যাংটকের সিংতামের গোলিতার, মঙ্গনের দিকচু এবং পাকিয়ংয়ের রংপো আইবিএম এলাকা। দিন দুয়েক আগে উত্তর সিকিমের মঙ্গনের পুলিশ প্রশাসনের তরফেই এ ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা
ক্রমাগত জলের চাপে যে কোনও মুহূর্তে হ্রদটি ফেটে যেতে পারে। তাতে ‘গ্লেসিয়ার লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’ হওয়ারও প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে। কারণ, হড়পা বানে জলস্ফীতি হলে ডুয়ার্সের নদীগুলিও ছাপিয়ে যাবে। আর ডুয়ার্সে যদি বন্যা হয়, তা আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তর সিকিমে একটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক হিমবাহ হ্রদ হিসাবেই বিবেচিত এটি। এই সংক্রান্ত খবর জিওকার্টো ইন্টারন্যাশনালে (লন্ডনে প্রকাশিত জার্নাল) প্রকাশিতও হয়েছিল ২০২২ সালে। বিখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ প্রফেসর সুনীলকুমার দে (এনইএইচইউ, শিলং) এবং প্রফেসর মিলাপ চাঁদ শর্মা (দিল্লির জেএনইউ)-এর অধীনে গবেষণা হয়েছিল। লাগাতার বৃষ্টির কারণে হ্রদের জলস্তর বৃদ্ধি পায়। ফলে মোরাইন বাঁধের উপর আরও জলের চাপ তৈরি হতে পারে। তাতে বাঁধ ভেঙে আর একটি গ্লেসিয়ার লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড ইভেন্ট তৈরি হতে পারে।’’
জেলা প্রশাসনের দাবি
এ বিষয়ে গ্যাংটকের জেলাশাসক তুষার নিখারে জানিয়েছেন, উপগ্রহের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, সাকো চো লেকের তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তাই তাপমাত্রা যে এতেই স্থির থাকবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। বৃহস্পতিবার সকালে ওই লেকের পরিস্থিতি ফের খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই আশঙ্কা থেকে কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলাশাসক বলেছেন, “সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে আমরা ওই লেকের আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ করে যদি সেখানে বিপর্যয় আসে তাহলে ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।” এর পাশাপাসি সেখানে থাকা একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রও কোনও রকম বিপর্যয় এলে তা মোবালিকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।