Advertisement

Bengali Migrants: বাঙালি পরিযায়ীরা কই? রাঁধুনি-পরিচারিকা পাচ্ছেন না নয়ডা-গুরুগ্রামের বাসিন্দারা

পুলিশের মারের ভয়, রাতারাতি টিকিট কেটে, কাজ-কর্ম ছেড়ে রাজ্যে ফিরে আসছেন পরিযায়ী বাঙালিরা। ফলত নয়ডা-গুরুগ্রামের আবাসনগুলিতে দেখা দিয়েছে রাঁধুনি-গৃহপরিচারিকার অভাব। কেন ফিরে আসছেন মোটা টাকা রোজগার ছেড়ে?

নয়ডার বস্তির চিত্র নয়ডার বস্তির চিত্র
অভিষেক দে
  • নয়ডা,
  • 12 Aug 2025,
  • अपडेटेड 2:46 PM IST
  • নয়ডা-গুরুগ্রাম থেকে রাতারাতি বাংলায় ফিরছেন পরিযায়ীরা
  • পুলিশের মারের ভয়ে মোটা টাকা রোজগারও ছেড়ে দিচ্ছেন তারা
  • রাঁধুনি-পরিচারিকা খুঁজতে হয়রান নয়ডা-গুরুগ্রামের আবাসিকরা

'রাঁধুনি ও গৃহপরিচারিকা প্রয়োজন'। নয়ডার গৌর সিটির ৭ নম্বর অ্যাভিনিউ আবাসনের বাসিন্দাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভেসে উঠল এই জরুরি বার্তা। গত দু'সপ্তাহে আশপাশের অন্যান্য আবাসনের গ্রুপেও এধরনের অসংখ্য বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসীদের হঠাৎ শহর ছাড়ার প্রবণতা নয়ডা ও গুরুগ্রামে তীব্র সংকট তৈরি করেছে পরিচারিকা ও রাঁধুনির। তাদের সেবার উপর নির্ভরশীল শত শত পরিবারকে প্রভাবিত করছে এই বিষয়টি। কিছু বাসিন্দার মতে, দক্ষিণ দিল্লির কিছু অংশও এই ইস্যুর জেরে প্রভাবিত। 

কী কারণে এমনটা ঘটছে?
জানা গিয়েছে, নয়ডা এবং গুরুগ্রাম ছেড়ে বেরনোর নেপথ্যে দু'টি কারণ রয়েছে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে। এক, বেআইনি বাংলাদেশি সন্ধানে পুলিশি অভিযান এড়ানো এবং দুই, বিহারের মতো SIR হলে তাঁদেরও নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা। 

নয়ডার হাইবাতপুরে থাকেন নুরজাহান। কাজ করেন গৌর সিটির একাধিক বাড়িতে। তাঁর পরিবার রাতারাতি তাঁকে ফেরাতে ট্রেনের টিকিট কেটে দিয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে-কে তিনি বলেন, 'আমার বস্তি থেকে একাধিক বাংলাভাষী বাড়ি ফিরে গিয়েছে।' 

গুরুগ্রামের পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে হোল্ডিং সেন্টারে আটকে রেখে মারধর করে জনৈক হাসান শেখকে। তারপর সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচেন তিনি। অন্য আর এক পরিযায়ী কসম মিঞাও গুরুগ্রাম থেকে ফিরে এসেছেন। তাঁর অভিযোগ, পরিচয় যাচাই করতে পুলিশ সর্বসমক্ষে তাঁকে উলঙ্গ করেছিল। 

অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশি বেআইনি বাসিন্দা গুরুতর সমস্যা। ভারতে এই মুহূর্তে ২০ মিলিয়ন বাংলাদেশি বেআইনি বাসিন্দা রয়েছে। ২০১৬ সালে সংসদে এই তথয দিয়েছিলেন কিরেণ রিজিজু।

প্রতিবাদে মমতা

মমতার আবেদন
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু'টি ইস্যু নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন। পরিযায়ী বাংলার শ্রমিকদের ফিরে আসার অনুরোধ করেছেন তিনি। পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'মুম্বই, উত্তরপ্রদেশ কিংবা রাজস্থানে থাকার কোনও দরকার নেই। হয়তো পিঠে-পায়েস খাওয়াতে পারব না তবে আমরা একটা রুটি খেলে আশ্বস্ত করছি আপনারাও একটি রুটি খেতে পারবেন। শান্তি এ রাজ্যে থাকুন। পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরও রয়েছে আপনাদের কাছে। আমাদের জানান কখন ফিরতে চাইছেন। আমরা ট্রেনে আপনাদের ফিরিয়ে আনার বন্দোবস্ত করব।'

Advertisement

নয়ডা ও গুরুগ্রামের কর্পোরেট ও আইটি হাবগুলো, যেখানে বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস, মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের উপরই নির্ভরশীল। রাস্তা সাফাই কর্মী, গাড়ি ধোয়ার কর্মী থেকে শুরু করে গৃহপরিচারক পর্যন্ত, সকলেই পরিযায়ী। অভিবাসী শ্রমিকদের উপর দমন-পীড়ন কেবল দিল্লি-NCR-এর অর্থনীতির মেরুদণ্ডকেই নাড়িয়ে দেয়নি, বরং মুক্তচিন্তার ভাবমূর্তিতেও আঘাত করেছে।

প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসী শ্রমিক ফিরে এসেছেন রাজ্যে। গ্রেটার নয়ডার গৌর সিটির ১৬টি আবাসনের আকাশখোলা ব্যালকনি আর কাচের দেয়ালের বাইরে সংলগ্ন এলাকায় রয়েছ বিশাল বস্তি। সেখানে বসবাস করেন শত শত অভিবাসী শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার থেকে এসেছেন এবং যারা কর্পোরেটে কর্মরতদের পরিবারগুলির দৈন্যন্দিন জীবন সচল রাখেন। সেই বস্তির অনেক ঘর এখন তালাবদ্ধ। সেখানকার বাসিন্দারা শহর ছেড়ে পালিয়েছেন, ফেলে গিয়েছেন আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন। ভাড়া করা ঘর, মালপত্র, পোশাক আর সন্তানদের পড়াশোনা স্তব্ধ হয়েছে রাতারাতি।

গুরুগ্রামের বস্তির চিত্র

বাস্তব চিত্র
প্রায় ১০ দিন আগে গুরুগ্রাম পুলিশ যখন তাঁর কয়েকজন আত্মীয়কে ধরে হোল্ডিং সেন্টারে পাঠায়, তখনই নুরজাহানের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাঁর মতোই নয়ডায় বাস করা প্রায় ৪৫-৫০ জন গৃহপরিচারিকা রাতারাতি পশ্চিমবঙ্গের ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলেছেন। কোচবিহারের বাসিন্দা নুরজাহান ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, 'নয়ডা পুলিশ আমাদের ১৫ অগাস্টের মধ্যে এলাকা ছাড়তে বলেছে। আমরা এখানে ৭-৮ বছর ধরে বাস করছি। শুধু বাংলা বলি বলেই আমরা বাংলাদেশি নই। আধারের মতো বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও আমরা চলে যাচ্ছি, কারণ আমরা কোনও ঝামেলায় জড়াতে চাই না।' 

নুরজাহানদের মতো মানুষের জন্য বাড়ি ফিরে যাওয়া মানে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ হারানো। বহু বছরের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে তিনি সম্প্রতি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন গুনছেন। গুরুগ্রামের আবাসিক এলাকায় গাড়ি পরিষ্কার করতেন হাসান শেখ। স্ত্রী করতেন গৃহপরিচারিকার কাজ। ঝড় সামলে নেবেন ভেবেছিলেন। কিছুতেই জীবিকা ছাড়তে চাননি। কিন্তু বস্তি থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মত পাল্টান। গত ২৬ জুলাই হাসান সহ আরও ২৫০ জনকে পুলিশ হোল্ডিং সেন্টারে নিয়ে যায়। তাদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। হাসান বলেন, 'আমাকে কাঁধে করে ফিরিয়ে এনেছিল আমার ভাইয়ের মতো বন্ধুরা। আমি এক মুহূর্ত নষ্ট না করে বাসের টিকিট কেটে পরের দিনই চলে আসি।

গুরুগ্রামের চুক্তিভিত্তিক দৈনিক মজুরির শ্রমিক কসাম মিঞা পশ্চিমবঙ্গে নিজের গ্রামে ফিরেছেন। তিনি বলেন, 'আধার বা ভোটার আইডি প্রমাণ হিসেবে মানছে না, স্কুলের কাগজ বা আমাদের দাদার বাসস্থানের কাগজ চাইছে। এখন আমরা সেসব কাগজ কোথা থেকে আনব?'

নয়ডায় রাঁধুনির কাজ করা অর্পুজা পশ্চিমবঙ্গে ফিরে ডোমিসাইল সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি নয়ডায় ফিরতে চান, কারণ পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে। স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্ত। অর্পূজার কথায়, 'আমার ভয়ের কিছু নেই, কারণ আমাদের পরিবার কয়েক দশক ধরে কোচবিহারে বসবাস করছে। আমি স্কুল-লিভিং সার্টিফিকেট ও ডোমিসাইল সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করব এবং সব ঠিকঠাক হলে আবার কাজে ফিরব।'
 

 

Read more!
Advertisement
Advertisement