
মেগা বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হল বিহারে। এবার NDA-র টার্গেট অনেকটাই কম। ১৬০ পার করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছেন নীতীশ কুমার ও তাঁর সহযোগী BJP এবং অন্যান্যরা। যা মোট ২৪৩ আসনের দুই তৃতীয়াংশ। 'আবকি বার ৪০০ পার' স্লোগানের ধারেকাছেও পৌঁছাচ্ছে না এবারে NDA-র এই ১৬০ আসনের টার্গেট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ২০২৪ সালের BJP-র '৪০০ পার' করার স্বপ্ন মাঠে মারা গিয়েছিল। বিহারের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল মনে করছে একাংশ। গত ৪ নভেম্বর ইন্ডিয়া টুডে টিভি-কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, 'পরিস্থিতি খুবই ভাল। আমরা অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছি। ১৬০-এর বেশি আসন জিতব আমরা।'
আঞ্চলিক সমস্যা, জাতপাতের রাজনীতি এবং প্রশান্ত কিশোরের জন সূরয পার্টির এন্ট্রি বিহারের ভোটে বড়সড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিহারের ১২১টি আসনে ভোটগ্রহণ হল। বাকি আসনগুলির ভোটগ্রহণ রয়েছে ১১ নভেম্বর। ফলপ্রকাশ হবে ১৪ নভেম্বর।
NDA নিজেদের সংকল্প পত্রে উল্লেখ করা প্রতিশ্রুতিগুলি রাখতে বদ্ধপরিকর। এই তালিকায় রয়েছে ১ কোটি চাকরি, বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা। NDA-র মধ্যে BJP লড়ছে ১০১টি আসনে। JDU-ও সমপরিমাণ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়াও LJP(RV) লড়ছে ২৯টি আসনে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে ১৭৪টি আসনে বিহারে এগিয়ে ছিল NDA জোটই। তবে লোকসভা ভোটের ফলাফলের সঙ্গে অনেক সময়েই মেলেনি বিধানসভার ফল। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে NDA পেয়েছিল ১২৫টি আসন, মহাগঠবন্ধন ১১০টি।
মহাগঠবন্ধন শিবিরে রয়েছে RJD, কংগ্রেস এবং বামেরা। তারা BJP-র '১৬০ পার' স্লোগানকে কটাক্ষ করেছে। ৬০ পেরোতেও কষ্ট হবে তাদের বলে দাবি করেছেন RJD নেতা মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি।
৭.৪ কোটি ভোটারের মধ্যে বিহারে এবার ১৪ লক্ষ প্রথমবারের ভোটার। এবার দেখার NDA-র উন্নয়নের পাল্লা নীতীশের বারবার দলবদল এবং দীর্ঘ ২ দশক শাসকবিরোধী থাকার থেকে ভারী হয় কি না। নয়তো ১৬০ আসন পেতেই কালঘাম ছুটে যাবে NDA-র।
শেষবার ২০১৫ সালে ১৬০ আসনের টার্গেট পূরণ হয়েছিল। সে সময়ে নীতীশ কুমারের JDU মহাগঠবন্ধনে RJD-র সঙ্গী ছিল। ১৭৮ আসন পেয়েছিল জোট। তার আগে NDA-র অন্তর্গত JDU, BJP একত্রে ২০৬ আসনে জয়ী হয়েছিল ২০১০ সালে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ এখনও মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'আবকি বার ৪০০ পার' স্লোগান অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সীমা পার করে গিয়েছিল। বিহারে '১৬০ পার'-এর টার্গেটও সেই ঝুঁকিই বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে। অমিত শাহ জোর দিয়ে বলেছেন, NDA ১৬০ আসনের টার্গেট পেরোবে। কিন্তু ৪০টির মধ্যে ৩০টি লোকসভা আসনে জয় পেলেও বিধানসভায় ১৬০ পেরনোর লক্ষ্যমাত্রা পেরনোর নিশ্চয়তা দেয় না।
অন্যদিকে, নির্বাচনে ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি নিয়েছে জন সূরয পার্টি। প্রশান্ত কিশোরের দল সমস্ত আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি, কর্মসংস্থান ও যুব সমস্যার উপর জোর দিয়ে তিনি NDA ও মহাগঠবন্ধন উভয়ের ভোটব্যাঙ্কেই ফাটল ধরাতে পারবেন। মহাগঠবন্ধনের প্রভাবশালী মুসলিম-যাদব আসনগুলিতেও প্রশান্ত কিশোরের দল ভোট কাটতে পারে। যদিও অমিত শাহ এই দাবিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বিহারের রাজনীতি এখনও অনেকাংশেই জাতভিত্তিক। NDA প্রার্থীতালিকায় ৩৫ জন মহিলাকে রেখেছে। অন্যদিকে মহাগঠবন্ধন ৩০ হাজার টাকার জীবিকা দিদি অনুদানের ঘোষণা করেছে। NDA-র নারীকেন্দ্রিক প্রচার করলেও সোশ্যাল মিডিয়ার শতাধিক রিলে তার প্রভাব তেমন পড়েনি বলেই ধরা পড়ছে। তার উপর ২ দশক ধরে নীতীশ কুমারের সরকারের প্রতি মানুষের ক্লান্তিও এসেছে। NDA-র ১ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি সংশয় তৈরি করেছে জনমানসে।
NDA যদি ১২২টির বেশি আসনে জিততে পারে তবেই জয় নিশ্চিত হবে। নিশ্চিত হবে নীতীশ কুমারের পঞ্চমবারের মেয়াদ। তবে ১৬০ পারের স্বপ্ন এখনও সূক্ষ্ম সুতোয় ঝুলছে। জাতপাত, যুবদের সমস্যা ও পরিবর্তনের প্রত্যাশায় বিভ্রান্ত ভোটাদের মধ্যে বিহারের ১৬০ পার শেষ পর্যন্ত ৪০০ পারের পথেই যেতে পারে বলে মনে ররা হচ্ছে।