বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক। শনিবার এক্স-এ পোস্ট করে ও পরে সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, 'যদি সুপ্রিম কোর্ট-ই আইন বানায়, তাহলে দেশে সংসদ ভবনের কোনও দরকার নেই। সংসদ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।'
কিন্তু নিশিকান্ত দুবে হঠাৎ এই মন্তব্য করলেন কেন? ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫ সংক্রান্ত এক শুনানি থেকেই এর সূত্রপাত। শীর্ষ আদালত এই আইনের 'Waqf by user' ধারা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আদালতকে সরকার আশ্বাস দেয়, ৫ মে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ধারাগুলি কার্যকর করা হবে না।
এরপরেই গোড্ডা থেকে চারবারের সাংসদ নিশিকান্ত দুবে দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্ট নিজের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আদালত সংসদে পাশ হওয়া আইন বাতিল করছে, এমনকি রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিচ্ছে—যিনি আবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। দুবে মনে করিয়ে দেন, সংবিধানের ৩৬৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন বানানোর অধিকার একমাত্র সংসদের।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'আপনি নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে কীভাবে নির্দেশ দিতে পারেন? রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। সংসদ এই দেশের আইন বানায়। আপনি সংসদকেই নির্দেশ দেবেন?'
বিজেপি সাংসদ অভিযোগ করেন, 'সুপ্রিম কোর্টই দেশে ধর্মীয় সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি করছে। আদালত যদি সব কিছু ঠিক করে দেয়, তাহলে সংসদ ও বিধানসভা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।'
'Waqf by user' ধারার ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দুবে। তিনি বলেন, 'রাম মন্দির মামলায় নথিপত্রের প্রমাণ চাওয়া হয়েছিল, অথচ এই ক্ষেত্রে তা চাওয়া হয়নি।'
তিনি অতীতে সুপ্রিম কোর্টের কিছু রায়কে ‘সীমা লঙ্ঘন’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার মধ্যে রয়েছে সমকামিতা বৈধ করা এবং আইটি আইনের ৬৬(এ) ধারা বাতিলের মতো রায়।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক তরজা। উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়-ও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক সভায় তিনি বলেন, 'বিচারপতিরা যদি আইনপ্রণেতা, প্রশাসক এবং সুপার সংসদ হয়ে ওঠেন, তাহলে তা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।'
দুবের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টকে প্রশ্ন করাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের দেশে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালতের। কেউ তা না মানলে সেটি দুর্ভাগ্যজনক।'
সিনিয়র আইনজীবী বিকাশ সিং বলেন, 'সংসদ আইন বানায়, রাষ্ট্রপতি তাতে সই করেন। যদি রাষ্ট্রপতি কোনও বিল বছরের পর বছর ফেলে রাখেন, তাহলে তা বৈধ হবে কি?'
বিজেপি সাংসদ দিনেশ শর্মা বলেন, 'ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কেউ লোকসভা ও রাজ্যসভাকে নির্দেশ দিতে পারে না। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিয়েছেন, সেটা চ্যালেঞ্জ করার অধিকার কারও নেই।'
আপ মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা কক্কর বলেন, 'নিশিকান্ত দুবে একটি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। আশা করি সুপ্রিম কোর্ট সুয়ো মটো অবমাননার মামলা শুরু করে তাঁকে জেলে পাঠাবে।'
বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ ও আইনজীবী মানন কুমার মিশ্র বলেন, 'মণিপুর ইস্যুতে আদালত নিজে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছিল। অথচ বাংলার অনেক জায়গা জ্বলছে, তখন আদালত নিশ্চুপ।'
জয়রাম রমেশ বলেন, 'তারা সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করতে চাইছে। আদালত বলছে, আইন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এটাই অসন্তোষের মূল কারণ।'