চণ্ডীগড় ইউনিভার্সিটির গার্লস হোস্টেলে মেয়েদের ভিডিও ফাঁস হওয়ার বড়সড় ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত সানি মেহতা এবং তার বন্ধু রঙ্কজ ভার্মা এমবিএ পড়ুয়াকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন, ভয় দেখান হচ্ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ভিডিও ভাইরাল করা নিয়ে। সানি মেহতার কথায় ওই ভিডিওটি পাঠিয়েছিলেন খোদ এমবিএ পড়ুয়া। অভিযুক্ত দুজনই এমবিএ ছাত্রীকে অন্য মেয়েদের ভিডিও তৈরি করে পাঠাতে চাপ দিচ্ছিল, না হলে তার ভিডিও ভাইরাল করে দেওয় হবে বলে ভয় দেখান হয়েছিল।
অভিযুক্তের নির্দেশে ওই এমবিএ ছাত্রী অন্য মেয়েদের ভিডিও পাঠাতে থাকে। একদিন এমবিএ ছাত্রী একটি ভিডিও বানানোর সময় ৬ জন মেয়ে তাকে এই কাজ করতে দেখে ফেলে। এর পর মেয়েরা তাকে জিজ্ঞেস করে সে ভিডিও করছে কেন?
যে ছাত্রী ভিডিও করত সেই বিষয়টি প্রকাশ করেছে
এর পরে এমবিএ ছাত্রী দাবি করেন যে তিনি চাপের মুখে ভিডিওগুলি করেছিলেন, তবে পরে তা ডিলিট করে দেন। পরে তিনি জানান, ছেলেরা তাকে তা করতে বলেছিল। তবে, শুরুতে তিনি বলেছিলেন যে তিনি ওই ছেলেদেরকে চিনতেন না। পরে তিনি সানি মেহতার ছবি দেখান, যিনি সিমলায় নিজের বেকারি চালান।
এই ৬ মেয়েই প্রথমে বিষয়টি তুলে ধরেন ওয়ার্ডেন রাজবিন্দর কৌরের সামনে, যাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পরে বিষয়টি ম্যানেজার রিতু রানাউতের সামনে তোলা হয়। রিতু অভিযুক্ত তরুণীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে ভিডিওগুলো করেছে বলে স্বীকার করে। পরে রিতুর অভিযোগে থানায় মামলা হয়। তিনি এই ভিডিও ডিলিট করতে বলেন। পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে। সূত্রের খবর, অভিযুক্তরা দিল্লি-মুম্বইয়ে বসে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথাও বলে।
পুলিশ SIT গঠন করেছে
চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে, বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে। এতে তিনজন মহিলা আধিকারিক রয়েছেন। অন্যদিকে, তিন অভিযুক্তকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
পুলিশ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
শনিবার, পড়ুয়ারা পঞ্জাবের মোহালিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখায়। আন্দোলনকারীরা বলেছেন, মেয়েদের রেকর্ড করা ভিডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও পুলিশ প্রাথমিকভাবে বলেছিল যে এমবিএ ছাত্রী শুধুমাত্র তার বয়ফ্রেন্ডকে নিজের ভিডিও পাঠিয়েছিল। এছাড়া ওই ছাত্রের ফোনে অন্য কোনো আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিছু ছাত্রীর স্নান করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, এমন খবর উড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর রোববার সন্ধ্যায় আবারও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এই মামলার তদন্তের জন্য SIT গঠন করেন পঞ্জাবের ডিজিপি গৌরব যাদব। তিনি বলেন, তদন্ত চলছে, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
অভিযুক্ত তিনজনই গ্রেফতার
এ ঘটনায় পুলিশ প্রথমে এক এমবিএ পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে। এর পর সিমলা থেকে গ্রেফতার করা হয় তার প্রেমিককে। একই সময়ে, রবিবার সন্ধ্যায় তৃতীয় অভিযুক্তকেও হিমাচল থেকে গ্রেফতার করা হয়। পঞ্জাব পুলিশ তিন অভিযুক্তের মোবাইল ফোন নিয়ে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। পুলিশ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলে সোমবার শিক্ষার্থীরা তাদের বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছে।