বৈবাহিক সম্পর্কে স্বামীর ‘অস্বাভাবিক যৌন আচরণ’ স্ত্রীর অসম্মতিতেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না—এমনই বিতর্কিত রায় দিয়েছে ছত্তীসগড় হাইকোর্ট। এক তরুণী বধূর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামীকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে আদালত।
কী ঘটেছিল?
স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে ‘অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক’ স্থাপন করেন। এর ফলে গুরুতর শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তরুণী স্ত্রীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের মতে, অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের কারণে পারিটোনাইটিস (পেটের ভিতরের প্রদাহ) ও মলদ্বারের ছিদ্রজনিত সমস্যা দেখা দেয়, যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই ঘটনার পর মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে স্বামীর বিরুদ্ধে ‘অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক’ ও ‘হত্যার চেষ্টা’র অভিযোগ আনা হয়। ট্রায়াল কোর্ট অভিযুক্ত স্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল, কিন্তু হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে তাঁকে মুক্তি দিয়েছে।
কী বলছে আদালত?
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যদি স্ত্রীর বয়স ১৫ বছরের বেশি হয়, তাহলে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে কোনও যৌন কার্যকলাপ ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে না। স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই ‘অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক’ ঘটলেও, সেটি আইনের চোখে অপরাধ নয়। ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক ধর্ষণের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না। ৩৭৫ ও ৩৭৭ ধারার মধ্যে সংঘর্ষ থাকায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই ধারাগুলোর ভিত্তিতে মামলা চলতে পারে না।
বৈবাহিক ধর্ষণের স্বীকৃতি নিয়ে বিতর্ক
ভারতে বর্তমানে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ (Marital Rape) আইনত অপরাধ নয়। এটি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলার শুনানি চলছে। তবে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের অবসরজনিত কারণে সেই শুনানি আপাতত স্থগিত রয়েছে। নতুন বেঞ্চ গঠিত হলে বিষয়টি নিয়ে ফের শুনানি হবে।
সরকারের অবস্থান
ভারত সরকারের মতে, বৈবাহিক সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার প্রয়োজন নেই। সংসদ ইতিমধ্যেই দাম্পত্য জীবনে নারীর সম্মতির সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তাই নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজন নেই বলে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য।
বিতর্কিত রায়, উঠছে সমালোচনার ঝড়
ছত্তীসগড় হাইকোর্টের এই রায় নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এটি একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করল, যা নারীদের প্রতি সহিংসতাকে বৈধতা দিতে পারে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের কারণে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে, সেখানে কীভাবে অভিযুক্ত স্বামীকে দোষমুক্ত করা হলো? পাশাপাশি, বৈবাহিক ধর্ষণের স্বীকৃতি না থাকায় অনেক নারী নিজেদের ওপর হওয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছেন না—এই বিষয়টিও সামনে আসছে।
এগোতে পারে সুপ্রিম কোর্ট?
বৈবাহিক ধর্ষণের স্বীকৃতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি পুনরায় শুরু হলে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে। তবে হাইকোর্টের এই রায় বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে নারীর সম্মতির গুরুত্ব নিয়ে এক নতুন বিতর্ক তৈরি করল। এখন দেখার, সুপ্রিম কোর্ট ভবিষ্যতে এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়।