৫০ বছর পর এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে ভারত ও চিন। ভারত ও চিনের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে বেজিং সততা রাখলে এশিয়ায় দুই দেশ ইতিহাস সৃষ্টিতে সফল হবে। এই চুক্তি বাস্তবায়নের অর্থ হল, ২০২০ সালের আগে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় যে জায়গায় ভারতীয় জওয়ানরা টহল দিতেন, সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়া। ভারত ও চিনের মধ্যে LAC-তে গালওয়ান-কাণ্ডের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এর মধ্যেই ব্রিকস সম্মেলনে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
প্রণিধানযোগ্য,ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে কোনও স্পষ্ট অবস্থান নেই। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (LAC বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা) সীমানা হিসাবে বিবেচিত হয়। এই এলএসি নিয়ে ভারত ও চিনের নানা দাবি রয়েছে। সে কারণে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত ও চিনের জওয়ানরা বহুবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ভারত ও চিনের মধ্যে এই চুক্তিতে ডেপসাং এবং ডেমচোকে টহল দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই চুক্তির পর ডেপসাং এবং ডেমচোক থেকে ভারত ও চিন-দুই দেশের সেনারাই পিছু হটবে।
২০২০ সালের এপ্রিলে গালওয়ানে এলএসি-তে দুই দেশের যে অবস্থান ছিল, সেখানে বেজিং ফিরলে তা হবে ভারতের জন্য বিরাট কূটনৈতিক জয়। মনে করিয়ে দিই, ২০২০ সালের অগাস্টে গালওয়ানে ভারত ও চিনের জওয়ানদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। তারপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই চুক্তির ফলে কী হতে চলেছে?
ডিসএনগেজমেন্টের অর্থ কী?
আজতকের সাংবাদিক গৌরব সাওয়ান্তের ব্যাখ্যা, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ডেপসাং-এর পেট্রোল পয়েন্ট ১০, ১১, ১১এ, ১২, ১২এ এবং পেট্রোল পয়েন্ট ১৩-তে পৌঁছতে পারবে ভারতীয় বাহিনী। ডেপসাং-এর রাকিনালা, ওয়াই জংশন, বোটল নেক এমন জায়গায়, যেগুলিতে ২০২০ সালের মে মাসের পর টহল চালাত ভারতীয় সেনা। তখন চিনা সেনারা ভারতীয়দের টহল দিতে বারণ করেছিল।
ভারতও একই কাজ করেছিল। চিনা সেনাদের ক্লেইম লাইন পর্যন্ত পৌঁছতে দেয়নি। ক্লেইম লাইন হল সেই এলাকা যেখান পর্যন্ত দুই দেশই নিজেদের সীমান্ত বলে দাবি করে। এভাবে দুই দেশের বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দুই দেশের বাহিনী পরস্পরের পথ আটকাবে না। দুই দেশের সেনাবাহিনী নিজেদের পেট্রোল পয়েন্ট এবং ক্লেইম লাইন পর্যন্ত যাবে। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক অরবিন্দ ইয়েলেরি বলেন,'আগে আমরা ডেপসাং-এর পেট্রোলিং পয়েন্ট ১০ পর্যন্ত যেতে পারতাম। এই চুক্তি বাস্তবায়নের পর আমরা পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৩ পর্যন্ত টহল দিতে পারব'।
ভারত কী বলছে?
দুই দেশের সেনাবাহিনী পূর্ব লাদাখের দক্ষিণ প্রান্তে টহল দিতে পারবে। সোমবার এ কথাই বলেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি জানিয়েছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়নের পরে ভারতীয় সেনারা আবারও ওই জায়গায় যেতে পারবে, যেখানে ২০২০ সালের আগে টহল দিত। এর আগে চিনের সঙ্গে এই চুক্তি সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার সময় বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বলেছিলেন,২০২০ সালে এই অঞ্চলগুলিতে উদ্ভূত সমস্যাগুলির সমাধান হয়েছে। চুক্তির আওতায় দুই দেশের সেনাবাহিনী ডেপসাং ও ডেমচোকে তাদের পুরনো জায়গায় ফিরে যাবে।
নয়াদিল্লির সামনে ঝুঁকল বেজিং?
চুক্তিতে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে,ডেপসাং এবং ডেমচোকে ২০২০-এর স্থিতাবস্থা আনতে নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি ভারত। গত সাড়ে ৪ বছরে বিতর্কিত এলাকায় চীনকে এক পাও এগোতে দেয়নি নয়াদিল্লি। এর পর ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে বসে চিন। এর ফলে দুই দেশের সেনারাই পিছু হটবে। কমবে সীমান্তের উত্তেজনা। লাদাখে দুই দেশের ৫০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন। তারা ২০২০ সালের গালওয়ান পূর্ববর্তী সময়ে ফিরে যাবে।