
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দীপক যোশীর দ্বিতীয় বিয়ে ঘিরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিয়ের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরই আরও দুই মহিলা নিজেদের যোশীর স্ত্রী বলে দাবি করেন। ফলে বিষয়টি ব্যক্তিগত পরিসর ছাড়িয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। এই পরিস্থিতিতে প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন যোশীর নববিবাহিত স্ত্রী পল্লবী সাক্সেনা।
আজতক-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পল্লবী জানান, হঠাৎ করে এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে তিনি ও তাঁর পরিবার গভীরভাবে বিপর্যস্ত। তাঁর কথায়, 'নিজের ব্যক্তিগত জীবন যে এভাবে প্রকাশ্য বিতর্কে পরিণত হবে, তা কল্পনাও করিনি।'
পল্লবীর দাবি, দীপক যোশী তাঁর প্রথম স্ত্রী বিজয়া যোশীর মৃত্যুর পরই তাঁকে বিয়ে করেছেন। বিজয়া যোশীর মৃত্যু হয় ২০২১ সালে কোভিডকালে। পল্লবীর স্পষ্ট বক্তব্য, তিনি ছাড়া দীপক যোশীর আর কোনও বৈধ স্ত্রী নেই।
অন্য দুই মহিলার দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে পল্লবী বলেন, তাঁদের বক্তব্যেই অসংগতি রয়েছে। শিখা মিত্রের দাবি অনুযায়ী ২০১৬ সালে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, অথচ সে সময় যোশীর প্রথম স্ত্রী জীবিত ছিলেন। উপরন্তু, শিখার স্বামী গৌতম মিত্র ২০১৮ ও ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই ছিলেন বলে পল্লবীর দাবি।
নম্রতা যোশী সম্পর্কে পল্লবী বলেন, ২০২১ সালে বিয়ে নিবন্ধনের কথা বলা হলেও তিনি কখনও দীপক যোশীর সঙ্গে বসবাস করেননি এবং বরাবরই নিজের বাপের বাড়িতে থেকেছেন। তাঁর বক্তব্য, যোশী নিজেই বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আদালতে দায়ের করেছিলেন। 'আইনত স্বীকৃত দাম্পত্যে কেউ এভাবে দূরে বা পলাতক থাকেন না,' বলেন পল্লবী।
সম্পর্কের শুরু ও বিয়ের কথা
পল্লবী জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দীপক যোশীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। দুই পরিবারের সম্মতিতেই সম্পর্ক এগিয়েছে। যোশী পরিবারের প্রবীণরাই তাঁর পরিবারের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যান। এরপর ৪ ডিসেম্বর ভোপালের একটি আর্য সমাজ মন্দিরে আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তার আগে বাড়িতেই হলদি (গায়ে হলুদ) ও মেহেন্দির (মেহেঁদি) মতো অনুষ্ঠান হয়েছিল।
কংগ্রেস ও কমলনাথ প্রসঙ্গ
নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে পল্লবী জানান, তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত এবং কমলনাথকে নিজের নেতা মনে করেন। বিয়ের দিন কমলনাথ তাঁকে শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ করেন বলেও জানান তিনি। তবে কংগ্রেসে সক্রিয় থাকাকালীন দীপক যোশীর সঙ্গে তাঁর কোনও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না বলেই দাবি পল্লবীর।
হয়রানি, হুমকি ও আইনি পদক্ষেপ
পল্লবীর অভিযোগ, শিখা মিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল মন্তব্য, গালিগালাজ ও ছবি ছড়িয়ে তাঁকে হেনস্থা করেছেন। এ নিয়ে তিনি অপরাধ শাখা, সাইবার ক্রাইম ও স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, ৬ ডিসেম্বর নম্রতা যোশী যোশীর বাড়িতে এসে হুমকি দেন এবং বাড়ির কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেন পল্লবী। এই ঘটনায় দেওয়াসের এসপি ও সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।
‘মন মিললে বয়স কোনও বাধা নয়’
স্বামী সম্পর্কে পল্লবীর বক্তব্য, দীপক যোশী একজন সংবেদনশীল ও শ্রদ্ধাশীল মানুষ। তিনি তাঁর কঠিন সময়ে মানসিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বয়সের ব্যবধান নিয়ে কটাক্ষের জবাবে পল্লবী বলেন, 'সংখ্যার চেয়ে ভাবনা ও অনুভূতির মিলটাই আসল।'
তিনি জানান, তাঁর ছেলে সাহেব সাক্সেনা দীপক যোশীকে বাবার মতোই দেখে, আর যোশীর সন্তানরাও তাঁকে মায়ের মর্যাদা দিয়েছে। ভবিষ্যতে দেওয়াস ও ভোপালের মধ্যে সময় ভাগ করে নিয়ে শান্তিপূর্ণ, ব্যক্তিগত জীবন কাটাতে চান বলেই জানান পল্লবী। তাঁর আবেদন, এই বিয়েকে রাজনৈতিক ইস্যু না বানিয়ে আইনি পথে সমস্যার সমাধান হোক।