কিয়দংশ বুথফেরত সমীক্ষাতেও আভাস দিয়েছে ২৭ বছর পর দিল্লিতে ফিরছে বিজেপি। হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের পর আরও একটি বিধানসভা ভোটে এগিয়ে মোদীর দল। স্বাভাবিকভাবে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে গেরুয়া শিবিরের নেতানেত্রীদের। এদিকে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের বিধায়করা বলছেন, অন্তত ৫০টি আসনে জিতবে আপ। এর মধ্যে আবার নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগও তুলেছে দুই বিরোধী। সবমিলিয়ে দিল্লির ভোটে বাজিমাত করবে কে, সেটা জানা যাবে আর কয়েক ঘণ্টা পরেই।
লোকসভা ভোটে মেলেনি বুথফেরত সমীক্ষা। প্রায় সবকটি সমীক্ষাই আভাস দিয়েছিল, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরছে বিজেপি। কিন্তু তা হয়নি। সরকার গঠন করেছে তারা, তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি গেরুয়া শিবির। তারই কি পুনরাবৃত্তি দেখা যাবে দিল্লিতে? যদি বুথফেরত সমীক্ষা মিলে যায় তাহলে আরও একটা ইতিহাস তৈরি করবে মোদী-শাহ জুটি। ২৭ বছর ধরে রাজধানীর ক্ষমতায় নেই বিজেপি। এর মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ীর থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী হয়ে দলের ব্যাটন চলে গিয়েছে মোদীর হাতে। একটা পরিসংখ্যান দিলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হবে। ১৯৯৯, ২০১৪, ২০১৯ এবং ২০২৪ সালে চারবার দেশের লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। কিন্তু দিল্লি দূর অস্তই!
দিল্লিতে টানা ৬টি নির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। রাজধানীর কাছে-পিঠের দুই রাজ্যের দিকে তাকালে দেখা যাবে, গত ২৭ বছরে উত্তর প্রদেশে বিজেপি তিনবার সরকার গঠন করেছে। এর মধ্যে মোদীর জমানায় টানা দু'বার। টানা তৃতীয়বার হরিয়ানার ক্ষমতায় ফিরেছে। এবার অধরা থাকা দিল্লিই হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে বলে আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা।
বুথফেরত সমীক্ষা কী বলছে?
৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দরকার ৩৬। ত্রিমুখী লড়াই এখানে- কংগ্রেস, আপ ও বিজেপি। কিন্তু বাস্তবের লড়াই আপ বনাম বিজেপি। বুথফেরত সমীক্ষাও কংগ্রেসকে ধর্তব্যের মধ্যে রাখেনি। গত দুটি লোকসভা ভোটেই (২০১৯ এবং ২০২৪) দিল্লির সাতটি আসনই গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের ঝুলিতে। অথচ বিধানসভার গাঁট তারা পার করতে পারছে না। তা-ও হয়ে গেল ২৭ বছর। ২০১৫ এবং ২০২০ সালে আপের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বিজেপি। তবে এবার বিজেপির দিকেই পাল্লাভারী। অন্তত বুথফেরত সমীক্ষাগুলি সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।
ভোটারদের কি মোদীর গ্যারান্টিতেই ভরসা?
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টিকে ভোট দিয়েছিলেন। বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, দিল্লির ভোটাররা মোদীর উপরে বিধানসভা ভোটেও আস্থা রাখছেন। রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, ভোটের ঠিক আগে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে করছাড়, অষ্টম বেতন কমিশন গঠন থেকে শুরু করে গরিবদের ফ্ল্যাট দেওয়া- এই ধরনের পদক্ষেপে বিজেপি অ্যাডভান্টেজ পেয়েছে দিল্লির ভোটে। এর পাশাপাশি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো মহিলাদের হাতে নগদ টাকা দেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা।
বিজেপি যখন মোদীর গ্যারান্টিতে ভরসা রাখছেন তখন কেজরিওয়ালের স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তি নিয়েই উঠে গিয়েছে প্রশ্ন। আবগারি কেলেঙ্কারিতে জেলে হয়েছিল কেজরিওয়ালকে। তাছাড়া লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিল তাঁর দল। সেই কংগ্রেসের সঙ্গে বিধানসভা ভোটে জোট তো করেননি, উল্টে রাহুল গান্ধীকে দুর্নীতিগ্রস্থ বলে আক্রমণ করেছেন কেজরিওয়াল। ফলে 'সুবিধেবাদী রাজনীতিক'-এর তকমা সেঁটে গিয়েছে তাঁর গায়ে।
রাজনীতির নানা মত, নানা সমীকরণ থাকলেও তা জনাদেশে কতটা প্রতিফলিত হবে, তা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারেন না। তাই আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই স্পষ্ট হয়ে যাবে, দিল্লি কার?