দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে এক বড়সড় চমক দেখালেন বিজেপি প্রার্থী প্রবেশ ভার্মা। নয়াদিল্লি আসনে আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হারিয়েছেন তিনি। ৩১৮১ ভোটের ব্যবধানের এই জয় শুধুমাত্র কেজরিওয়ালের জন্য নয়, আপ-এর জন্যও বড় ধাক্কা। প্রবেশ ভার্মার এই জয়ের মাধ্যমে দিল্লির রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে, যেখানে তাঁকে বিজেপির ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবেও ভাবা হচ্ছে।
রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
প্রবেশ ভার্মার রাজনৈতিক যাত্রা কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি তার পারিবারিক উত্তরাধিকারেরও প্রতিফলন। তিনি দিল্লির প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাহেব সিং ভার্মার ছেলে। ১৯৭৭ সালের ৭ নভেম্বর জন্ম নেওয়া প্রবেশ ভার্মা তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন দিল্লি পাবলিক স্কুল, আর.কে. পুরম থেকে। পরবর্তীতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরোরি মাল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে এমবিএ সম্পন্ন করেন, যা তাকে ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতিতে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।
প্রবেশ ভার্মার রাজনৈতিক উত্থান
২০১৩ সালে প্রবেশ ভার্মা বিজেপির টিকিটে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং মেহরৌলি আসনে জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম দিল্লি আসন থেকে জিতে সাংসদ হন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের মহাবল মিশ্রকে ৫,৭৮,৪৮৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে রেকর্ড গড়েন।
২০২৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি তাকে নয়াদিল্লি আসন থেকে প্রার্থী করে। এই আসন ঐতিহ্যগতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর আসন হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এখান থেকে জয়ী ব্যক্তির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রবেশ ভার্মা এই নির্বাচনে কেজরিওয়াল ও কংগ্রেসের সন্দীপ দীক্ষিতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
তীক্ষ্ণ বক্তব্য ও বিতর্কিত অবস্থান
প্রবেশ ভার্মা শুধু তার নির্বাচনী সাফল্যের জন্য নয়, বরং তার কড়া বক্তব্যের জন্যও পরিচিত। ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (CAA) বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করে তিনি বিতর্ক তৈরি করেন।
২০২২ সালে তিনি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ব্যবসা বয়কটের ডাক দেন, যা রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তোলে।
২০২৩ সালে ছট পুজোর আগে এক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর বিতর্কের ভিডিও ভাইরাল হয়।
দিল্লির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও বিজেপির পরিকল্পনা
প্রবেশ ভার্মার এই জয় দিল্লির রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছিল, কিন্তু আপ-এর জনপ্রিয়তা এবং কেজরিওয়ালের সামাজিক প্রকল্পের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে এবার কেজরিওয়ালের পরাজয় বিজেপিকে নতুন করে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। প্রবেশ ভার্মাকে ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখা হচ্ছে, যদিও দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং দিল্লির জনমতই ঠিক করবে তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থান।