দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তাঁর দল আম আদমি পার্টির (AAP) জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিজেপি দীর্ঘ ২৭ বছর পর দিল্লির ক্ষমতা দখল করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত, যা শুধুমাত্র কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের প্রতি জনমতের পরিবর্তনকেই ইঙ্গিত করে না, বরং আপের জাতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথেও বড় ধাক্কা দেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রজত শেঠি এই পরাজয়ের ব্যাখ্যায় বলেন, "সঙ্গীকে কখনও হালকাভাবে নেবেন না"— যা কেজরিওয়ালের ক্ষেত্রে দিল্লির প্রতি তার অবহেলাকে নির্দেশ করে। দিল্লির পরিবর্তে অন্যান্য রাজ্যে আপের ভোটব্যাঙ্ক তৈরির চেষ্টা দলটির জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
দিল্লি আসন হারালেন কেজরিওয়াল
এই নির্বাচনে কেজরিওয়াল শুধু দিল্লির সামগ্রিক জনসমর্থনই হারাননি, বরং তার নিজের শক্ত ঘাঁটি নতুন দিল্লি আসনও খুইয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী প্রবেশ ভার্মা প্রায় ৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে তাঁকে পরাজিত করেছেন। এই হার স্পষ্ট করে দেয় যে, কেজরিওয়াল এবং তাঁর দল দিল্লির বাস্তব সমস্যাগুলোর প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি।
জাতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার ব্যর্থতা
এক সময় রাজনৈতিক মহলে AAP-কে ভারতের অন্যতম সফল রাজনৈতিক স্টার্টআপ হিসেবে দেখা হতো। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সমর্থনে দিল্লির সরকার গঠন করার পর, আপ জাতীয় রাজনীতিতে দ্রুত প্রসার লাভ করে। পরবর্তীতে দলটি পাঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, হরিয়ানা-সহ একাধিক রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
কিন্তু এই প্রসারের ফলে আপের মূল ঘাঁটি দিল্লির প্রতি মনোযোগ কমে যায়। যদিও পাঞ্জাবে সরকার গঠন ও গুজরাটে দুটি আসন জয়ের মতো কিছু সাফল্য রয়েছে, তবে সার্বিকভাবে আপের জাতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখনও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি।
দিল্লিতে AAP-এর জনপ্রিয়তা কমার কারণ
বিজেপির দাবি অনুযায়ী, দ্বিতীয় মেয়াদে আপ সরকার দিল্লির উন্নয়নকে উপেক্ষা করেছে। অবকাঠামো ও নাগরিক সমস্যাগুলোর প্রতি দলের অবহেলা স্পষ্ট হয়েছে:
রাস্তার বেহাল দশা— শহরের বহু রাস্তায় গর্ত ও অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে।
আবর্জনার স্তুপ— পৌর কর্পোরেশনের দায়িত্বে থেকেও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে পারেনি আপ।
বায়ু ও জল দূষণ— দিল্লির বায়ুদূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
যমুনার অপরিচ্ছন্নতা— যমুনার জল দূষণ মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির অসন্তোষ— সাধারণ মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির আস্থা হারিয়েছে আপ।
বিজেপির উত্থান ও আপের সংকট
বিজেপির শক্তিশালী প্রচার কৌশল এবং স্থানীয় সমস্যাগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কারণে দিল্লির জনগণের মনোযোগ তাদের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। অপরদিকে, আপের অন্যান্য রাজ্যে প্রসার ঘটানোর কৌশল দিল্লির ভোটারদের অসন্তুষ্ট করেছে।