উত্তর-পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্য অসম, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুর – গত দু’দিনের মুষলধারে বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। লাগাতার ভারী বৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জোরকদমে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ চলছে।
আবহাওয়া দফতর সতর্ক করেছে, আগামী দিনগুলিতে আরও বৃষ্টি হতে পারে। গোটা অঞ্চলে জারি হয়েছে সতর্কতা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃষ্টির কারণেই বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত।
অসম: ভূমিধসে প্রাণ গেল একই পরিবারের তিন সদস্যের
অসমের রাজধানী গৌহাটিতে ভূমিধসের কবলে বহু ঘরবাড়ি। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের, যাঁদের মধ্যে একই পরিবারের তিন সদস্য রয়েছেন। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি মাটি আলগা হয়ে গিয়ে এক বিশাল অংশ ধসে পড়েছে বসতবাড়ির উপর। প্রশাসন ওই এলাকায় নতুন করে সতর্কতা জারি করেছে। অসমের গোলাঘাটে আরও দু’জন এবং লখিমপুরে একজন ব্যক্তি জলে ডুবে মারা গিয়েছেন।
অরুণাচল প্রদেশ: গাড়ি ভেসে গিয়ে মৃত্যু ৭ জনের
চিন সীমান্ত ঘেঁষা অরুণাচলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। একটি গাড়ি জলে ভেসে গিয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য একটি ঘটনায় আরও দু’জন ডুবে যান। রাজ্যে এখন পর্যন্ত মোট ৯ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে।
মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়: ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনের মৃত্যু
গত ২৪ ঘণ্টায় মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ে ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৮ জনের। এই তিন রাজ্যেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে থেমে থেমে।
মণিপুর: ইম্ফলে বিপর্যস্ত জনজীবন
মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে জনজীবন সম্পূর্ণ স্তব্ধ। শহরের বহু জায়গায় জল জমে গেছে। প্রশাসন ইম্ফাল নদীর পাশে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছে। জারি হয়েছে বন্যা সতর্কতা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: বৃষ্টি চলবে
আবহাওয়া দফতরের মতে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী দিনগুলিতেও ভারী বৃষ্টি চলবে। অসমের বহু জেলায় রেড ও অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি হয়েছে। বাকি রাজ্যগুলির জন্য অরেঞ্জ এবং ইয়েলো অ্যালার্ট জারি হয়েছে।
অসমে ১৭ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত, ৭৮ হাজার মানুষ সমস্যায়
অসমে ১৭টি জেলা বন্যা ও ভূমিধসের কবলে পড়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছেন ৭৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রায় ১,২০০ জনকে ৫টি ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা লখিমপুর, যেখানে ৪১,৬০০-এরও বেশি মানুষ সমস্যায়। ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর ঊর্ধ্বমুখী। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। সিক্কিমের চুংথাং-এ তিস্তা নদী ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
NDRF ও SDRF-এর তৎপরতা
অসমে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), পুলিশ ও দমকল বাহিনী উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে।
স্কুল বন্ধ, বিমান চলাচলে প্রভাব
অসমের দু’টি জেলায় শনিবার স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার গৌহাটি বিমানবন্দরে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বিমান পরিষেবায় সমস্যা দেখা দেয়।
অরুণাচলেও চলছে ত্রাণ কার্যক্রম
অরুণাচলে প্রশাসন ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ ত্রাণ এবং উদ্ধারকাজে ব্যস্ত। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে দ্রুত সাহায্য করা হচ্ছে।