Dhirubhai Ambani Birth Anniversary: রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ আজ দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সংস্থা। তেল, গ্যাস থেকে শুরু করে টেলিকম, রিটেল সর্বত্র ছড়িয়ে রিলায়েন্সের সাম্রাজ্য। আম্বানি পরিবার ভারতে রীতিমতো সেলিব্রেটি। লক্ষ লক্ষ মানুষ রিলায়েন্স গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, একসময় এই রিলায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা নিজে পেট্রোল পাম্পে সামান্য বেতনের চাকরি করতেন? হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন, এভাবেই জিরো থেকে শুরু করেছিলেন ধীরুভাই আম্বানি। আজ সেই গল্পই শেয়ার করব আপনাদের সঙ্গে।
মুকেশ ও অনিল আম্বানির বাবা মুকেশ আম্বানি কর্মজীবনের শুরুতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ছিলেন। তাঁর বাবা শিক্ষক ছিলেন। সেই সময় স্কুল শিক্ষকরা তেমন বেতন পেতেন না। ফলে পরিবার সামলাতে ক্লাস টেনেই পড়া ছাড়তে বাধ্য হন ধীরুভাই। ছোটোখাটো চাকরি দিয়েই কর্মজীবনের সূচনা করেন।
১৯৪৯ সালে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে চাকরি করতে দেশ ছেড়ে ইয়েমেনে চলে যান ধীরুভাই আম্বানি। সেখানে মাত্র ৩০০ টাকা বেতনে, একটি পেট্রোল পাম্পে চাকরি করতেন।
জীবনে সফল, বড় মানুষদের মধ্যে একটি গুণ দেখবেন, তাঁরা কখনও কোনও কাজকেই ছোট মনে করেন না। সব কাজকেই সমান গুরুত্ব দেন। ধীরুভাই আম্বানিও কিন্তু সেই একই মানসিকতার ছিলেন। তাই ভিনদেশে গিয়ে সেই পেট্রোল পাম্পের সামান্য় কাজকেই ভীষণ সিরিয়াসলি করতেন। এত ছোট একটা ছেলে দূর দেশে এসে এত পরিশ্রম করছে দেখে পেট্রোল পাম্পের মালিকরাও অবাক হয়ে যান। কয়েক বছরের মধ্যে তাঁকে প্রোমোশন দিয়ে পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার করে দেন তাঁরা।
এদিকে এই কাজ করতে করতেই পেট্রোল ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখতে থাকেন ধীরুভাই আম্বানি। প্রায় ৫ বছর পার হওয়ার পর তিনি ভাবলেন, অনেক হয়েছে, এবার নিজের কিছু একটা করতে হবে। ততদিনে বেশ কিছু টাকা জমিয়েও ফেলেছেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ১৯৫৪ সালে ভারতে ফিরে আসেন। দিন কয়েক বাড়িতে থাকলেন। তারপর ৫০০ টাকা নিয়ে মুম্বই রওনা দিলেন।
তখনও কিন্তু ঠিক কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন জানেন না। কিন্তু এটুকু জানেন যে কিছু একটা করতেই হবে। সেই মতো মুম্বইয়ের বিভিন্ন বাজার ঘুরতে শুরু করেন। লোকে কী বিক্রি করছে, বাজারে কীসের চাহিদা আছে সেটা বোঝার চেষ্টা করেন।
কয়েকদিনের মধ্য়েই বুঝতে পারেন, ভারতে ধীরে ধীরে পেট্রোলের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় জোগান কম। অন্যদিকে বিদেশে ভারতীয় মশলার দারুণ চাহিদা। এরপরেই এই দুই সেক্টরেই ব্যবসা শুরুর প্ল্যান করেন।
রিলায়েন্সের শুরু:
জমানো টাকা দিয়েই ছোট স্কেলে প্রথমে মশলা ও পলিয়েস্টার কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতেই ভাল রেসপন্স পান। এরপর কোনওমতে টাকা জমিয়ে একটি ছোট্ট অফিসঘর নিয়ে নেন। সেখানে মাত্র একটি টেবিল, তিনটি চেয়ার আর একটি টেলিফোন। সেখান থেকে বিদেশে মশলা রফতানি ও ভারতে বিদেশ থেকে কাপড় আমদানি শুরু করেন। দিনে ১০ ঘণ্টা এই ছোট্ট, ৩৫০ স্কোয়ারফুটের অফিসেই পড়ে থাকতেন। ক্রমেই বাড়তে শুরু করে ধীরুভাই আম্বানির ব্যবসা। ১৯৭৩ সালের ৮ মে রিলায়েন্স কমার্স কর্পোরেশন স্থাপন করেন ধীরুভাই আম্বানি।
মশলা ও পলিয়েস্টার কাপড়ের ব্যবসায় রিলায়েন্স এতটাই বাড়তে শুরু করে যে, ধীরে ধীরে অন্য সেক্টরেও তাদের ব্যবসা ছড়াতে শুরু করে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়ামের ব্যবসাও ছিল। আর সেটাই রিলায়েন্সের ভাগ্য বদলে দেয়। দেশের ধনীতম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন ধীরুভাই।
ভাবুন তো, ১৭ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে পেট্রোল পাম্পে কাজ করত যে ছেলেটা, সেই হয়ে উঠল দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি।
২০০২ সালের ৬ জুলাই প্রয়াত হন ধীরুভাই আম্বানি। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী কোকিলাবেন আম্বানি সংস্থার শাসনভার গ্রহণ করেন। পরে ব্যবসা ছেলে মুকেশ আম্বানি ও অনিল আম্বানির মধ্যে ভাগ হয়। মুকেশ আম্বানি রিলায়েন্সের ব্যবসাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে নিয়ে যান। তাঁর মালিকানাধীন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মার্কেট ক্যাপ ১৬.৫২ লক্ষ কোটি টাকা। এটি বর্তমানে বাজার মূল্যের নিরিখে দেশের বৃহত্তম সংস্থা।