
লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণ মামলার তদন্ত যত গভীর হচ্ছে, ততই উঠে আসছে নতুন নতুন নাম ও সংযোগ। এবার আলোচনায় ডক্টর শাহিন শহীদ। যিনি জৈশ-ই-মহম্মদ (জেইএম)-এর সঙ্গে যুক্ত ফরিদাবাদের 'হোয়াইট-কলার জঙ্গি মডিউল'-এর অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হয়েছেন। আর এই মামলায় মুখ খুললেন তার প্রাক্তন স্বামী ডক্টর জাফর হায়াত।
কানপুরের বাসিন্দা ও চিকিৎসক হায়াতকে ক্রাইম ব্রাঞ্চ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাঁর অফিসে। তিনি জানিয়েছেন, 'আমার আর শাহিনের বিয়ে হয়েছিল ২০১০ সালে, আর ২০১৩ সালে তা শেষ হয়। সেটা ছিল একেবারে সাজানো বিয়ে। বিচ্ছেদের পর আর কোনও যোগাযোগ ছিল না।'
বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে হায়াত বলেন, 'আমাদের মধ্যে কোনও বড় ঝামেলা ছিল না। কিন্তু শাহিন বিদেশ যেতে চেয়েছিল, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ায়, নতুন সুযোগের সন্ধানে। আমি তাতে রাজি ছিলাম না। আমি চেয়েছিলাম ভারতে থেকেই কাজ করতে। এই মতবিরোধের কারণেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।'
তাদের দুই সন্তান রয়েছে, যারা বর্তমানে হায়াতের কাছেই থাকে। তিনি জানান, 'শাহিন যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, ওদের আমি নিজের কাছে রাখি। এখন খবরের কাগজে যা বলা হচ্ছে, সেটা ওদের জানাইনি।'
শাহিনের চরমপন্থী মানসিকতা ছিল কি না, জানতে চাইলে হায়াতের উত্তর, 'একদম না। আমরা দু’জনেই শিক্ষিত ও উদারপন্থী পরিবার থেকে এসেছি। কোনও ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থার লক্ষণ ওর মধ্যে দেখিনি।'
তবে তিনি স্বীকার করেছেন, শাহিনের ছোট ভাই পারভেজ আনসারি, যিনি দিল্লি বিস্ফোরণ মামলার তদন্তে গ্রেফতার, একসময় চিকিৎসা শাস্ত্রের ছাত্র ছিলেন। 'ও খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল, বেশি কথা বলত না', বলেন হায়াত।
ফরিদাবাদে জেইএম-সংযুক্ত জঙ্গি মডিউল ফাঁস হওয়ার পর ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে শাহিন সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, শাহিন ছিলেন জেইএম-এর মহিলা শাখা 'জামাত-উল-মোমিনাত'-এর ভারতীয় ইউনিটের সম্ভাব্য প্রধান।
অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি বিদেশি হ্যান্ডলারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মহিলাদের যুক্ত করার পরিকল্পনাও করছিলেন। এরই মধ্যে এই মডিউলের সদস্য উমর নবী তার হুন্ডাই আই ২০ গাড়িতে লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১০ জনকে হত্যা ও অন্তত ২৫ জনকে আহত করেছে। তদন্তকারীদের মতে, শাহিন ছিলেন এই নেটওয়ার্কের অন্যতম বুদ্ধিজীবী মুখ, যিনি চিকিৎসক পরিচয় ব্যবহার করে আড়ালে চরমপন্থী কার্যকলাপ চালাতেন।