বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সরব বিরোধীরা। এবার তাদেরই অভিযোগের জবাবে মুখ খুলল নির্বাচন কমিশন। রবিবার কমিশনের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ২৪ জুন জারি হওয়া নির্দেশিকার নিয়ম মেনেই ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা এসআইআর চলছে। সেই মূল নিয়মে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজও মসৃণভাবে চলছে বলে দাবি করেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এসআইআরের আওতায় ভোটারদের ২৫ জুলাই ২০২৫-এর মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা জমা না দিতে পারেন, তাহলে ‘ক্লেমস অ্যান্ড অবজেকশনস’ পর্বে ফের সুযোগ পাবেন। ফলে নথি না দিলেই বিপদ বা নথি না দিলেও চলবে, এমন বিভ্রান্তিকর ভাবনার কোনও কারণ নেই।
কমিশনের দাবি, কিছু ব্যক্তি ২৪ জুনের নির্দেশিকা না পড়েই বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছে কমিশন।
এর আগে এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। সেখানে লেখা ছিল, 'এখন শুধুমাত্র ফর্ম পূরণ করলেই চলবে, নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।' এই প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, দলিত এবং বঞ্চিত শ্রেণির ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চাইছে শাসক দল।
বিহারে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন। মোট প্রায় ৮ কোটিরও বেশি ভোটারের তালিকা সংশোধনের এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে।
বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব প্রশ্ন তুলেছেন, দেশের বাকি অংশে না চালিয়ে শুধুমাত্র বিহারেই কেন এই ধরনের স্পেশাল রিভিশন চালু হল? তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আগের বার সারা দেশেই ২০০৩ সালে এই ধরনের সংশোধন করা হয়েছিল।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারাও এই নিয়ে দিল্লি ও পটনায় নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এই অভিযানে কমিশনের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীরা পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে অজুহাত তৈরি করছে বলেই অভিযোগ তাদের।
বিজ্ঞাপন বিতর্কের প্রেক্ষিতে বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-র দফতর জানায়, “২৪ জুন ২০২৫-এর নির্দেশিকা মেনেই বিহারে এসআইআরের কাজ চলছে। ১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম থাকবে, যাঁরা এনুমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছেন।”
সিইও আরও জানান, যারা এখনও নথিপত্র জমা দেননি, তাঁদের জন্য পরে জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। সবকিছুই নির্বাচন কমিশনের মূল নির্দেশ অনুসারে হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
পরবর্তীতে কমিশনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি শক্ত বিবৃতি পোস্ট করে বলা হয়, “এসআইআর বিহারে নিরবচ্ছিন্নভাবে ও কমিশনের নির্দেশ মেনেই চলছে। নির্দেশিকায় কোনও পরিবর্তন হয়নি।”
কমিশনের ব্যাখ্যা, এই সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে নাগরিকত্বের বয়স অনুযায়ী যোগ্যদের অন্তর্ভুক্তি, দ্রুত নগরায়ণ, বারবার স্থানান্তর, মৃত্যুর তথ্য না জানানো এবং বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভুলভাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে।
কমিশনের বক্তব্য, এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হল, ভুলত্রুটি-মুক্ত এবং নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা।