এশিয়ার কিছু দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে সংক্রমণের হঠাৎ বৃদ্ধির প্রভাব এবার ভারতেও সামান্যভাবে পড়তে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ মে পর্যন্ত দেশে সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ২৫৭। আশার কথা, অধিকাংশের লক্ষণই এতটাই সামান্য যে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি।
তবুও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। সোমবার, স্বাস্থ্য মন্ত্রক এনসিডিসি, আইসিএমআর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল এবং সরকারি হাসপাতালগুলির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক করেছে। বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
ডাঃ মায়াঙ্ক সাক্সেনা (ফোর্টিস, নয়ডা) জানান, দেশে বর্তমানে কোভিডের JN.1 সাবভেরিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে, যা ওমিক্রনের অন্তর্ভুক্ত। আক্রান্তদের বেশিরভাগ কেরালা, মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। এই ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণগুলি মূলত শুষ্ক কাশি, মাথাব্যথা, জ্বর এবং স্বাদ বা গন্ধ হ্রাস—যা আগের মতোই।
তবে ইতিমধ্যেই সরকার GEMCOVAC-19 নামক ওমিক্রন-ভিত্তিক নতুন টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে কিছু উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের উপর। পুরনো টিকাও এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আতঙ্ক নয়, বরং সতর্কতা জরুরি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির হার বা মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে গ্রীষ্মের ছুটির মরসুমে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া জরুরি। যাঁরা ভ্রমণে যাচ্ছেন, তাঁদের কোভিড হটস্পট অঞ্চল সম্পর্কে সচেতন থাকা, মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে, বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, কিন্তু নজরদারি ও প্রস্তুতি জারি রয়েছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং ও আইডিএসপি নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে এবং হাসপাতাল ও ওষুধ সরবরাহ পর্যবেক্ষণও চলেছে।
বিদেশের পরিস্থিতির প্রভাব কতটা?
ডাঃ মহসিন ওয়ালি (স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতাল) জানান, হংকং ও সিঙ্গাপুরে JN.1-এর সাবভেরিয়েন্ট LF.7 ও NB.1.8-এর সংক্রমণ দেখা গেছে। তবে এগুলির সংক্রমণ ক্ষমতা বা তীব্রতা ভারতের আগের ভ্যারিয়েন্টগুলির তুলনায় বেশি নয়। ফলে ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।
সাধারণ মানুষের জন্য পরামর্শ
ফ্লু বা জ্বর-কাশির মতো উপসর্গ থাকলে অবহেলা না করে কোভিড পরীক্ষা করান।
বয়স্ক, গর্ভবতী ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরুন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
গুজবে কান দেবেন না, সরকারি তথ্যেই ভরসা রাখুন।