
তীব্র বিরোধিতার মাঝেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়ে গেল 'জি রাম-জি' বিল। এই বিলকে 'অগণতান্ত্রিক' আখ্যা দিয়ে সংসদ ভবনের বাইরে রাতভর ধরনায় বসেছেন তৃণমূলের সাংসদরা। মাঙ্কি টুপি আর কম্বল গায়ে সংসদের সিঁড়ির সামনে অবস্থানে বসে থাকতে দেখা গেল দোলা সেন, ডেরেক ও'ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেব, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের।
১২ ঘণ্টার এই ধরনা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। তাদের দাবি MNREGA প্রকল্প বাতিল করে মহাত্মা গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসম্মান করেছে মোদী সরকার। সুস্মিতা দেব বলেন, '১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি তুলে নেওয়ার কারণেই এই প্রকল্প সংশোধনের নামে বাতিল করা হচ্ছে। এৎ বিরুদ্ধেই আমাদের ১২ ঘণ্টার ধরনা কর্মসূচি। কোনও কমিটির দ্বারা স্ক্রুটিনি করা হল না। কেবলমাত্র বুলডোজ করে দেওয়া হল মানুষের অধিকার। যেভাবে ওরা মহাত্মা গান্ধীর নাম সরিয়ে দিল তাতে BJP-র মুখোশ খুলে গিয়েছে।' বিক্ষোভকারী সাংসদদের হাতে দেখা যায়, 'MGNREGA-কে হত্যা করবেন না, যেমন ভাবে গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন' স্লোগান লেখা পোস্টার।
গ্রামীণ কর্মসংস্থান সংক্রান্ত এই নতুন বিল ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এই বিল মহাত্মা গান্ধীর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করছে এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের অধিকারকে দুর্বল করছে। যদিও বিলটিতে গ্রামীণ পরিবারের প্রতি নিশ্চিত কর্মসংস্থানের দিনের সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা হয়েছে। তবে একাধিক বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে নয়া সংশোধিত প্রকল্পটিতে। নতুন ব্যবস্থায় মোট খরচের ৪০ শতাংশ বহন করতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকে, যেখানে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন (MGNREGA) পুরোপুরি কেন্দ্র-অর্থায়িত ছিল।
তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস সহ একাধিক বিরোধী দল এই বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, গান্ধীর নাম সরিয়ে দেওয়া এবং রাজ্যের উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ আসলে ঘুরপথে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বিলটির পক্ষে সওয়াল করে একে ‘রামরাজ্য’-র আদর্শে অনুপ্রাণিত এক কল্যাণমূলক সংস্কার বলে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার তীব্র হট্টগোল ও প্রতিবাদের মধ্যেই লোকসভায় বিলটি পাশ হয়। বিরোধী সাংসদরা সংসদের ভিতরে বিলের কপি ছিঁড়ে ছড়িয়ে দেন। শুক্রবার মধ্যরাত পেরিয়ে রাজ্যসভাতেও বিলটি পাশ হয়, যদিও তার আগে বিরোধীরা ওয়াকআউট করে এবং বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলে।
কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি রাজ্যসভায় বলেন, 'ক্ষমতায় ফিরলে আবার মহাত্মা গান্ধীর নাম সহ মূল MNREGA আইন পুনর্বহাল করা হবে।' কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, 'এই আইন শেষ পর্যন্ত কৃষি আইনের মতোই প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে এবং জনগণ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবে।' এই বিলের প্রতিবাদে কংগ্রেস ১৭ ডিসেম্বর দেশজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তাদের অভিযোগ,BJP ও RSS মিলিতভাবে অধিকারভিত্তিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নতুন আইনে গ্রামীণ প্রতিটি পরিবারকে বছরে সর্বাধিক ১২৫ দিনের মজুরি ভিত্তিক কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ধারা ২২ অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে খরচের ভাগ হবে ৬০:৪০। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য, পার্বত্য রাজ্য ও নির্দিষ্ট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে তা হবে ৯০:১০। ধারা ৬ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারগুলি চাষের মরশুমে বছরে সর্বোচ্চ ৬০ দিন আগামভাবে কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।