
চাপের মুখে পিছু হটল কেন্দ্র। প্রতিটি মোবাইল ফোনে বাধ্যতামূলক ভাবে আগে থেকে 'সঞ্চার সাথী' অ্যাপ ইনস্টল করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিল সরকার। প্রত্যেক নাগরিকের সাইবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে স্মার্টফোনে 'সঞ্চার সাথী' ইনস্টল বাধ্যতামূলক হবে বলে ঘোষণা করেছিল NDA সরকার। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল দেশজুড়ে। জানানো হয়েছিল, এই অ্যাপ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কেবলমাত্র নাগরিকদের অসাধু সাইবার প্রতারণা চক্রের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই ইনস্টল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
কেন্দ্র কী জানিয়েছে?
ভারত সরকার জানিয়েছে, এটা নাগরিকদের 'জন ভাগিদারি' প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখা হবে। অসাধু সাইবার প্রতারকদের থেকে রক্ষা করার জন্যই 'সঞ্চার সাথী' অ্যাপ। এই অ্যাপের আর কোনও কার্যকারিতা নেই। সর্বোপরি জানানো হয়েছে, যখন মনে করবেন, গ্রাহকরা এই অ্যাপ আনইনস্টল করে দিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লক্ষ গ্রাহক নিজেদের মোবাইলে এই 'সঞ্চার সাথী' অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারেরও বেশি সাইবার প্রতারণা মামলা ধরা পড়ছে এই অ্যাপে। প্রতিদিনই এই অ্যাপ ডাউনলোডের সংখ্যা বাড়ছে এবং গ্রাহকদের মধ্যে সাইবার প্রতারণা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই এই অ্যাপটি বাধ্যতামূলক ইনস্টলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। গত ১ দিন ৬ লক্ষ নাগরিক এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। যা আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। এই অ্যাপের উপর নাগরিকদের ভরসা অটুট বলেও দাবি করেছে মোদী সরকার।
সরকারের এই ঘোষণার পর থেকেই গত ২ দিন ধরে খবরের শিরোনামে 'সঞ্চার সাথী' অ্যাপ। সরকারি নির্দেশিকা ছিল, ভারতে বিক্রি হওয়া সমস্ত নতুন ফোনে 'সঞ্চার সাথী' অ্যাপটি আগে থেকে ইনস্টল থাকবে। এই নির্দেশের পর থেকে সংসদ থেকে শুরু করে রাস্তা, সর্বত্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। নাগরিকদের গোপনীয়তা বজায় থাকছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
'সঞ্চার সাথী' অ্যাপটি ওপেন করার পর ৫টি নয়া ফিচার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলি নাগরিক-কেন্দ্রিক পরিষেবা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সরকার অ্যাপটিকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়া গুজবগুলির সমাধান এবং এর নেপথ্যের সত্যতাও ব্যাখ্যা করেছে।
কী কী পরিষেবা মিলবে এই অ্যাপে?
> সন্দেহভাজন/প্রতারণামূলক কল/ মেসেজ রিপোর্ট করুন: আপনার স্মার্টফোনে যদি কোনও সাইবার জালিয়াতি কল, মেসেজ পান, তাহলে আপনি তাৎক্ষণিক ভাবে এই অ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট করতে পারবেন।
> হারিয়ে যাওয়া/চুরি হওয়া মোবাইল ফোন ব্লক: যদি আপনার স্মার্টফোন হারিয়ে যায় বা ভুল জায়গায় থাকে তাহলে আপনি অন্য অ্যাপ বা ওয়েব পোর্টাল ব্যবহার করে চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করতে পারবেন এবং IMEI নম্বরটি ব্লক করতে পারবেন। IMEI নম্বর খুঁজে পেলে তা আনব্লকও করা যেতে পারে।
> সঞ্চার সাথী পোর্টালের সাহায্য আপনি নিজেই পরীক্ষা করতে পারেন আপনার নামে কতগুলি সিম কার্ড রয়েছে।
> স্মার্টফোনের সত্যতা পরীক্ষা: আপনি যদি নতুন বা পুরনো স্মার্টফোন কেনেন, তাহলে সঞ্চার সাথী অ্যাপে IMEI নম্বর দিয়ে ফোনের রিপোর্ট কার্ড দেখতে পারবেন।
> ভারতীয় নম্বর থেকে আসা আন্তর্জাতিক কলেক রিপোর্ট: আপনি ভুয়ো নম্বর থেকে আসা কলের রিপোর্টও করতে পারেন। আন্তর্জাতিক চক্রের অনেক সাইবার অপরাধী ভারতীয় নম্বর ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারণা করে। ব্যবহারকারীরা সহজেই তা রিপোর্ট করতে পারেন।
সঞ্চার সাথী অ্যাপের সুবিধা ও ঝুঁকি
কেন্দ্র জানিয়েছে, সঞ্চার সাথী অ্যাপে গোপনীয়তার কোনও ঝুঁকি নেই। এই অ্যাপটি কেবল সুবিধা প্রদান করে। এটি নাগরিত-কেন্দ্রিক পরিষেবা প্রদান করে। এতে সন্দেহজনক ফোন কল, মেসেজ রিপোর্ট করা যায়। হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া ফোনেরও রিপোর্ট করা যাবে।