
পাহাড়ে ফের রাজনৈতিক তাপমাত্রা বাড়াল নতুন বিতর্ক। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA)। শুক্রবার জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপা জানিয়ে দিলেন, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার কোনও সরকারি বা বেসরকারি স্কুলেই রাজ্য সংগীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গাওয়া হবে না।
তিনি বলেন, “পাহাড়ের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, যাকে সম্মান জানানোই আমাদের কর্তব্য। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। গোর্খা, লেপচা, ভুটিয়া, বাঙালি, আদিবাসী। তাই কোনও একক সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।”
এর আগে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বৃহস্পতিবার এক নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, রাজ্যের সমস্ত স্কুলে প্রার্থনা সভার সময় রাজ্য সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক। সেই নির্দেশ পাহাড়েও পৌঁছতেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা।
জিএনএলএফ ও ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্ট-সহ পাহাড়ের একাধিক রাজনৈতিক দল এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নীরজ জিম্বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানান, “পাহাড়ে বহু ভাষাভাষীর মানুষ বাস করেন। এখানে জোর করে রাজ্য সংগীত চাপিয়ে দেওয়া যায় না।”
ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্টের আহ্বায়ক অজয় এডওয়ার্ডও মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে চিঠি দিয়ে লেখেন, “কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমরা গভীর শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই গান পাহাড়ের গোর্খাদের কথা ভেবে লেখা হয়নি। তাই এটিকে বাধ্যতামূলক না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠতেই অনীত থাপা শুক্রবার স্পষ্ট জানান, “মাধ্যমিক পর্ষদের নির্দেশ পাহাড়ে কার্যকর করা হবে না। কারণ এখানে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির সহাবস্থান। তাই ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গাওয়া সম্ভব নয়।”
এরপরই জিটিএ সচিব দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের বিদ্যালয় পরিদর্শকদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, পাহাড়ের সমস্ত স্কুলে প্রাতঃকালীন প্রার্থনায় নেপালি ভাষায় প্রথাগত সংগীত গাওয়া চলবে। সেই নিয়মই বহাল থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের পরেই পাহাড়ে ফের চড়েছে রাজনৈতিক পারদ। রাজ্য সরকারের সঙ্গে জিটিএর এই অবস্থান বিরোধ আরও একবার তুলে আনল সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রশ্নকে কেন্দ্রীয় আলোচনায়।