গুজরাটের ভদোদরা জেলায় গম্ভীরা সেতু ধসের ঘটনাকে ঘিরে এক মর্মান্তিক দৃশ্য উঠে এসেছে সামনে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, এক মা আর্তনাদ করছেন 'মারো চোকরা ডুবি গায়ো' (আমার ছেলে ডুবে যাচ্ছে)। পরিবার নিয়ে যাত্রাপথে থাকা সেই মহিলা সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন, যখন সেতুর ধসে পড়ে তাদের গাড়ি মহিসাগর নদীতে তলিয়ে যায়।
বুধবার এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে, যখন ভদোদরা ও আনন্দ শহরের সংযোগকারী গম্ভীরা সেতুর একটি বিশাল অংশ হঠাৎ ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি গাড়ি, দুটি ট্রাক, দুটি ভ্যান এবং একটি অটোরিকশা নদীতে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা।
ভুক্তভোগী মহিলা তাঁর ছেলে, মেয়ে, স্বামী এবং জামাইকে নিয়ে বাগদানা যাচ্ছিলেন। তিনি নিজে গাড়ির ট্রাঙ্কের কাছে বসে ছিলেন এবং জানালার কাচ ভেঙে কোনরকমে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু গাড়িটি লক হয়ে যাওয়ায় বাকি চারজন ভেতরে আটকে পড়ে যান এবং সেতু ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে তলিয়ে যান।
ভদোদরার কালেক্টর অনিল ধামেলিয়া জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন কয়েকজন। ঘটনার আট ঘণ্টা পরেও একটি ট্যাঙ্কার সেতুর ধসে যাওয়া অংশে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকতে দেখা গিয়েছে। চালক পালাতে পারলেও এখনো তার খোঁজ মেলেনি। উদ্ধারকাজে ক্রেন ও JCB-র মাধ্যমে একটি ডুবে যাওয়া ট্রাক উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা, আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন নিহতদের পরিজনদের জন্য।
মুখ্যমন্ত্রী প্যাটেল ধসের ঘটনায় কারিগরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। জানা গিয়েছে, ১৯৮৫ সালে নির্মিত এই ৯০০ মিটার দীর্ঘ সেতুর ২৩টি স্প্যানের মধ্যে একটি স্প্যান ধসে পড়েছে। সেতুটিকে পূর্বেই বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, মাত্র তিন মাস আগেই এই স্থানে ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার।