ভারতের শীর্ষ আদালতের এক ঐতিহাসিক রায়ে, 'অমানবিক' হাতে টানা রিকশা ব্যবস্থার অবসান ঘটতে চলেছে। মহারাষ্ট্রের পাহাড়ি শহর মাথেরানে হাতে টানা রিকশার প্রচলিত ব্যবস্থাকে সংবিধানের মূল আদর্শের পরিপন্থী বলে অভিহিত করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আগামী ছ’মাসের মধ্যে এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি বি আর গাভাই-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কঠোর ভাষায় জানিয়েছে, স্বাধীনতার ৭৮ বছর ও সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছর পরও যদি এক মানুষকে দিয়ে আরেক মানুষকে টানানো হয়, তা হলে সেটি শুধু অমানবিক নয়, বরং মানব মর্যাদা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রতি চরম অবমাননা।
প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, “কেউই স্বেচ্ছায় রিকশা টানেন না, এটা বেছে নেওয়ার পেশা নয়। জীবিকার আর কোনও পথ না থাকাতেই মানুষ এই কাজ করতে বাধ্য হন।” আদালত মনে করে, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে তা সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতিকে অপমান করার সামিল হবে।
এই পেশা ছেড়ে দিলে রিকশাচালকদের জীবিকা হারানোর আশঙ্কা থেকেই আদালত মহারাষ্ট্র সরকারকে একটি পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ই-রিকশা চালু করারও পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ্য, কলকাতা শহরে ২০০৫ সালেই হাতে টানা রিকশা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, এখনও শহরের কিছু এলাকায় তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মাথেরানের এই রায় গোটা দেশজুড়েই এক শক্ত বার্তা দিচ্ছে, সমাজে মানবিক মর্যাদা, বিকল্প জীবিকা এবং প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার চাহিদা আর অবহেলা করা চলবে না।