পাহাড়ে মহাপ্রলয়। হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে অতিবর্ষণ। আর তার জেরে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পাহাড়ি নদী। পাহাড়ে ভয়ানক ধস। ভূমিধস,বন্যা সব মিলিয়ে যেন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে প্রকৃতি। ভারতের এই দুই পাহাড়ি রাজ্যই বর্ষার শুরু থেকে ভয়ানক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। গত ২৪ জুন থেকে হিমাচলে ২১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এখনও ৩৮ জন নিখোঁজ। রাজ্যে বৃষ্টির ফলে ১০,০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরাখণ্ডে বর্ষা আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ ১৯ জন। রাজ্যের ৬৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
হিমাচলে গত তিন দিন ধরে ধ্বংসলীলা
গত রবিবার থেকেই হিমাচলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর জেরে সিমলা, সোলান সহ বহু জেলায় ভূমিধস হয়েছে। সিমলায়, সামার হিল, ফাগলি এবং কৃষ্ণনগর ভূমিধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যে বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে তিন দিনে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ ১৩ জন।
বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে রাজ্যের পরিকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু জানিয়েছেন, পরিকাঠামো পুনর্নির্মাণই এখন সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্ষায় ভারী বৃষ্টির কারণে রাজ্যের প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে যে পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার পুনর্নির্মাণে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সড়ক ও জল সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণে এমনিতেই অনেক সময় লাগে। তবে প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেনা, বিমান বাহিনী, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ বন্যা দুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে। পুলিশ এবং হোম গার্ডের কর্মীরাও উদ্ধারকার্যে নেমেছেন।
মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে ভূমিধসে ৪টি বাড়ি ভেঙে পড়ে। ভূমিধসে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকায় ১৫টি বাড়ি খালি করে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষা দফতর ১৯ অগাস্ট রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভূমিধসের কারণে রাজ্যজুড়ে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৪ জুন বর্ষা শুরুর পর থেকে রাজ্যে প্রায় ৮০০টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ১০,৭১৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডেপুটি সিএম মুকেশ অগ্নিহোত্রী হিমাচল প্রদেশে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার আর্জি জানিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় কাংড়া জেলার ইন্দোরা এবং ফতেহপুরের বন্যা কবলিত এলাকা থেকে ১,৭৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
NDRF ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করেছে। বুধবার এনডিআরএফ জানিয়েছে, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং পঞ্জাবে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৯৬০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ১০,০০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই রাজ্যগুলিতে NDRF-এর ২৯টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে।