সম্প্রতি প্রায় ৬২,০০০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯৭টি LCA তেজস মার্ক ১এ যুদ্ধবিমান কেনার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই চুক্তিটি মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগকে শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি কেবল ভারতের বিমান বাহিনীর (IAF) যুদ্ধবিমান বহরকে বাড়াবে না বরং এটিকে আধুনিক ও দেশিয় প্রযুক্তিতে সজ্জিত করবে। বিমান বাহিনীর হাতে বর্তমানে ৩১ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ৪২টি স্কোয়াড্রন। প্রতিটি স্কোয়াড্রনে গড়ে ১৮টি জেট রয়েছে, যার অর্থ ভারতীয় বিমান বাহিনীর মোট ৫৫৮টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে...
তবে, পুরনো মিগ-২১, মিগ-২৩ এবং মিগ-২৭-র অবসরে যাওয়ার ফলে স্কোয়াড্রনের সংখ্যা কমে গিয়েছে। শেষ দুটি মিগ-২১ স্কোয়াড্রন (সংখ্যা ৩ এবং ২৩) ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে অবসরে যাবে, যার ফলে স্কোয়াড্রনের সংখ্যা ২৯ এ নেমে আসবে।
৯৭টি এলসিএ মার্ক ১এ এর প্রভাব
৯৭টি এলসিএ মার্ক ১এ জেট কেনার মাধ্যমে ভারতীয় বিমান বাহিনীর তেজস বহরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হবে। বর্তমানে আইএএফ-এর কাছে ৪০টি তেজস মার্ক ১ জেট (২টি স্কোয়াড্রন) রয়েছে। ৮৩টি এলসিএ মার্ক ১এ ইতিমধ্যেই অর্ডার করা হয়েছে (২০২১ সালে, চুক্তির মূল্য ৪৮,০০০ কোটি টাকা)। নতুন চুক্তির মাধ্যমে আরও ৯৭টি এলসিএ মার্ক ১এ জেট যুক্ত হলে মোট ১৮০টি এলসিএ মার্ক ১এ এবং ৪০টি মার্ক ১ জেট, অর্থাৎ ২২০টি তেজস জেট হবে। এটি আইএএফ বহরের একটি প্রধান অংশ হবে। এই জেটগুলি পুরনো মিগ-২১-কে প্রতিস্থাপন করবে এবং স্কোয়াড্রনের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে। এলসিএ মার্ক ১এ-তে ৬৫% এরও বেশি দেশিয় উপকরণ রয়েছে। এটি উন্নত AESA রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট এবং অ্যাস্ট্রা মিসাইলের মতো প্রযুক্তিতে সজ্জিত। এটি একটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার জেট, যা আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে মাটিতে আক্রমণ চালাতে সক্ষম।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর বহর কত বড় হবে?
৯৭টি LCA Mark 1A অন্তর্ভুক্তির পর বিমান বাহিনীর বহরে প্রায় ৬০০-৬২০টি যুদ্ধবিমান থাকবে, যার মধ্যে থাকবে ২২০টি তেজস (মার্ক ১ এবং মার্ক ১A) এবং অন্যান্য জেট (Su-30 MKI, রাফাল, MiG-29, Mirage এবং Jaguar)। এটি ৩৩-৩৪টি স্কোয়াড্রনের সমতুল্য হবে। তবে, এটি এখনও ৪২টি স্কোয়াড্রনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।
হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ১২টি LCA Mark 1A জেট এবং ২০২৯ সালের মধ্যে ৮৩টি জেট ডেলিভারি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ১০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০৩৫ সালের মধ্যে ৯৭টি নতুন জেট ডেলিভারি শেষ হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
৬০টি স্কোয়াড্রনের লক্ষ্য
২০৪৭ সালের মধ্যে বিমান বাহিনী তাদের বহর ৬০টি স্কোয়াড্রনে (প্রায় ১,০৮০-১,২০০ জেট) করার লক্ষ্য নিয়েছে। পাকিস্তান এবং চিন - দুটি ফ্রন্ট থেকে ভারতের প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকির কারণে এই লক্ষ্যটি প্রয়োজনীয়। চিনের কাছে পঞ্চম প্রজন্মের J-20 সহ ১,৯০০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান রয়েছে, যখন পাকিস্তান তার JF-17 বহর আপগ্রেড করছে।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য IAF-এর পরিকল্পনা রয়েছে
LCA Mark 2: এটি তেজসের একটি উন্নত সংস্করণ, যা GE F414 ইঞ্জিন দিয়ে সজ্জিত হবে এবং ৬,৫০০ কেজি পেলোড বহন করতে পারবে। আইএএফ ১২০-২০০টি এলসিএ মার্ক ২ জেট অর্ডার করার পরিকল্পনা করছে। এর প্রথম প্রোটোটাইপ ২০২৫ সালের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের শুরুতে উড়বে। ২০২৯ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হবে। এটি মিগ-২৯, মিরাজ ২০০০ এবং জাগুয়ারের স্থলাভিষিক্ত হবে।
অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (AMCA): এটি ভারতের পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার হবে, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। IAF ২০০টি AMCA জেট (মার্ক ১ এবং মার্ক ২) কিনতে চাইছে। এতে স্টিলথ, সুপারক্রুজ এবং উন্নত সেন্সর থাকবে।
মাল্টি-রোল ফাইটার এয়ারক্রাফট (MRFA): IAF Rafale, F-15EX, F/A-18 সুপার হর্নেট, টাইফুন এবং Su-35 এর মতো বিকল্প সহ ১১৪টি নতুন ফাইটার জেট কেনার পরিকল্পনা করছে। স্কোয়াড্রনের ঘাটতি দ্রুত পূরণ করার জন্য এই চুক্তি করা হবে।
Su-30 MKI আপগ্রেড: IAF তার ২৬০টি Su-30 MKI জেটকে দেশে তৈরি উত্তম AESA রাডার, ডিজিটাল ককপিট এবং নতুন মিশন কম্পিউটার দিয়ে আপগ্রেড করবে। এতে ৭৮% দেশিয় সামগ্রী থাকবে।
মানবহীন বিমান (UAV): IAF ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০-৫০টি ড্রোন (ছোট, মাঝারি এবং বড়) কিনবে। যেমন DRDO ঘাতক এবং ALFA-S সোয়ার্ম ড্রোন, নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক যুদ্ধের জন্য।
চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
উৎপাদনে দেরি: GE F404 ইঞ্জিন সরবরাহে ব্যাঘাতের কারণে তেজস মার্ক 1A এর সরবরাহ বিলম্বিত হয়েছে। প্রথম জেটটি ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে সরবরাহ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। HAL ২০২৫ সালে ১২টি জেট সরবরাহ করবে।
দেশে তৈরি ইঞ্জিন: তেজস বর্তমানে আমেরিকান GE F404 ইঞ্জিনের উপর নির্ভরশীল। ভারতের কাবেরী ইঞ্জিন প্রকল্প চলছে। কিন্তু ধীর গতিতে। HAL এবং GE এখন ভারতে F414 ইঞ্জিন যৌথভাবে উৎপাদন করবে।
বেসরকারি সেক্টরের সুযোগ: সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে যা তেজস এবং AMCA এর উৎপাদনে বেসরকারি সেক্টরকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এটি উৎপাদনের হার বাড়াবে, খরচ কমাবে।