বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীদের মধ্যে অন্যতম আন্দামানের নর্থ সেন্টিনেলিজ। আন্দামান-নিকোবারের উত্তরের সেন্টিনেল দ্বীপে থাকেন এই উপজাতির মানুষরা। অনেকেই জানেন, আন্দামানের এই দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করা বেআইনি। বাইরের জগৎ থেকে আসা কাউকেই সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
কিন্তু, ভারতে আদমশুমারির সময় তাঁদের কীভাবে গোনা হবে? আদমশুমারির টিম কী সেন্টিনেলিজদেরও গুণবে? না কি তাঁদের বাদ দিয়েই পরিসংখ্যান সাজানো হবে?
সেন্টিনেলিজের কাছে গেলেই মৃত্যুর আশঙ্কা
উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে আজ পর্যন্ত যারাই ঢোকার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই বিপদের মুখে পড়েছেন। ২০০৬ সালে দু'জন ভারতীয় মৎস্যজীবী ভুল করে দ্বীপের কাছে চলে যান। তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেহদুটি বাঁশের খুঁটিতে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন সেন্টিনেলিজরা।
২০০৪ সালের ভয়ংকর সুনামির পর এক সেনা হেলিকপ্টার দ্বীপের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। তখনও এক জন আদিবাসী তীর ছুড়ে আক্রমণ করেন। সেই ঘটনায় সারা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল।
আদমশুমারি কীভাবে হবে?
খুব শীঘ্রই ভারতের আদমশুমারি শুরু হচ্ছে। কিন্তু সেন্টিনেলিজদের সংখ্যা গোনার বিষয়টি নিয়েই চিন্তিত সকলে। কারণ সেখানে গিয়ে কোনও তথ্য সংগ্রহ করা রীতিমতো প্রাণঘাতী হতে পারে। তেমনই সাধারণ মানুষরা আদিবাসীদের সংস্পর্শে এলে তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বহির্জগতের ভয়ানক রোগ। দ্বীপে বিচ্ছিন্নভাবে থাকায় তাঁদের সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই নেই। তাছাড়া এতে তাঁদের সংস্কৃতিও বিপন্ন হতে পারে।
স্যাটেলাইট ও ড্রোনই ভরসা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোন বা স্যাটেলাইট থেকে ছবি তুলে দূর থেকেই সংখ্যা আন্দাজ করা যেতে পারে। যদিও তা নিয়েও নৈতিকতার প্রশ্ন উঠেছে। আদিবাসী সমাজের কী তবে গোপনীয়তার অধিকার নেই? চাইলেই তাঁদের উপর থেকে ছবি তুলে নেওয়া যায়? এই নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
নৃবিজ্ঞানী ডঃ এম শশীকুমার জানালেন, প্রযুক্তির সাহায্যে সংখ্যা আন্দাজ করা বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এতে কতটা সঠিক তথ্য মিলবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আগে যা করা হয়েছিল
এর আগের আদমশুমারিতে সেন্টিনেলিজদের সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন রক্ষার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই দ্বীপের আশেপাশের এলাকা ‘নিষিদ্ধ অঞ্চল’ বলে ঘোষণা করেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ আইনত নিষিদ্ধ।
শুধু সেন্টিনেলিজ নয়, সমস্যা রয়েছে শোম্পেনদের নিয়েও
গ্রেট নিকোবার দ্বীপে রয়েছে আরও একটি আদিবাসী গোষ্ঠী—শোম্পেন। আধা-যাযাবর এই জনজাতির সংখ্যা আনুমানিক ২০০। তাঁরাও প্রায় নাগালের বাইরে।
২০১১ সালের আদমশুমারিতে শোম্পেনদেরও সম্পূর্ণ ভাবে গোনা যায়নি। আর সেন্টিনেলিজদের তো কখনওই নয়।
তখন সমুদ্রের দূর থেকে অনুমান করা হয়েছিল, দ্বীপে ১৫ জন বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা।