এই গরমে AC চালিয়ে ঠান্ডা হাওয়া নিতে কে না ভালবাসে!কিন্তু এবার সেই আরামে লাগাম দিতে চলেছে কেন্দ্র। আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর ঘোষণা করেছেন, খুব শীঘ্রই একটি নতুন নিয়ম চালু হতে চলেছে, যার ফলে কোনও এয়ার কন্ডিশনারেই আর তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামানো যাবে না, আবার ২৮ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা বাড়ানোও যাবে না।
কী বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর বলেন, 'AC ব্যবহারে একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড আনা হচ্ছে। এখন থেকে এসির তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি থেকে ২৮ ডিগ্রির মধ্যেই রাখতে হবে। এর বাইরে গিয়ে কেউ ঠান্ডা বা গরম করতে পারবেন না।' এই সিদ্ধান্তকে ‘প্রথমবারের মতো একটি পরীক্ষা’ বলে বর্ণনা করেছেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, 'এটি একটি নতুন ধরনের উদ্যোগ। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, তেমনই মানুষ অভ্যস্ত হবেন একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থায়।'
কোথায় কোথায় প্রযোজ্য হবে এই নিয়ম?
এই নতুন নিয়ম কেবল বাড়ি বা অফিসে ব্যবহৃত এসির ক্ষেত্রেই নয়, প্রযোজ্য হবে গাড়ির এয়ার কন্ডিশনারেও। মানে, আপনার গাড়ির এসিও আর ১৬ বা ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় চলবে না।
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
সরকারের মতে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের চিন্তা, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, এবং এসির বাড়তে থাকা ব্যবহার। এসি যত বেশি ঠান্ডা করে, তত বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বৈদ্যুতিক চাহিদা এবং গ্রিডের উপর। অনেক সময় দেখা যায়, খুব কম তাপমাত্রায় এসি চালানোর জন্য হঠাৎ করে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায় এবং লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সরকারের আশা, যদি সবাই ২০ থেকে ২৮ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা রাখেন, তাহলে তীব্র গরমের সময়ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে না। পাশাপাশি, এতে বিদ্যুৎ বিলও কমবে সাধারণ মানুষের।
আগে কী নিয়ম ছিল?
২০২০ সালে এনার্জি এফিসিয়েন্সি ব্যুরো (Bureau of Energy Efficiency - BEE) নির্দেশ দিয়েছিল, সব স্টার লেবেলড এসির ডিফল্ট তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। অফিস ও বাণিজ্যিক স্থানে তা ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে বলা হয়। তবে তখন তা ছিল সুপারিশ মাত্র। এবার যে নিয়ম আনা হচ্ছে, তা বাধ্যতামূলক হতে চলেছে। মানে, এসি নির্মাতা সংস্থাগুলোকেও সেই অনুযায়ী মডেল বানাতে হবে।
এতে কী লাভ?
এই নিয়ম চালু হলে—
বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে
পরিবেশ রক্ষা হবে
বৈদ্যুতিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণে থাকবে
মানুষের মাসিক বিদ্যুৎ বিল কমবে
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়বে
কিছু প্রশ্নও উঠছে
তবে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে— যদি কারও ব্যক্তিগত পছন্দ হয় ১৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঘুমনো, তিনি কী করবেন? এই নিয়মে তো ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কিছুটা খর্ব হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, গৃহস্থের ঘরের তাপমাত্রা সরকার কীভাবে ঠিক করে দেবে? এ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে সরকার বলছে, এটা একটি প্রাথমিক উদ্যোগ। মানুষের অভ্যাস একটু একটু করে বদলাতে হবে। ভবিষ্যতে জলবায়ুর বিপদ এড়াতে এমন আরও অনেক নিয়ম আসতে পারে।
ভারতের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও গরমপ্রবণ দেশে, যেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে এসি ব্যবহারে এই ধরনের মানদণ্ড বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। এবার দেখা যাক, মানুষ এই নিয়মে কীভাবে সাড়া দেয়, এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কতটা সফল হয় এই পদক্ষেপ।