ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। গত সপ্তাহে পহেলগাওঁয়ের বৈসরান উপত্যকায় জঙ্গি হামলার পর ভারত 'অপারেশন সিঁদুর' চালিয়ে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়, যার ফলে ১০০-র বেশি জঙ্গি নিহত হয়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ভারতের শহরগুলিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করলেও ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা ব্যর্থ করে দেয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্বশক্তিগুলি এখন নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে।
তুরস্ক পাকিস্তানের পাশে প্রকাশ্যে
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের জনগণ ও জঙ্গি হামলায় নিহতদের জন্য প্রার্থনা করেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, 'আমরা উদ্বিগ্ন যে এই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। আল্লাহ যেন আমাদের শহীদ ভাইদের রহমত করেন।'
এরদোগানের এমন মন্তব্যে ভারত সরকার ও জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কূটনৈতিক মহল বলছে, তুরস্ক আগে থেকেই কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানঘেঁষা অবস্থান নেয়, এবং এই উত্তপ্ত সময়ে তার পুনরাবৃত্তি করেছে।
চিন গ্রহণ করেছে ‘নিরপেক্ষতা’র কৌশল
চিন, যাকে পাকিস্তানের 'অল ওয়েদার ফ্রেন্ড' বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে পক্ষ নেয়নি। বেইজিং-এর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, 'ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই আমাদের প্রতিবেশী, এবং আমরা তাদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।' যদিও পাকিস্তান চিনা অস্ত্র ব্যবহার করে ভারত আক্রমণের চেষ্টা করেছে, তবুও বেইজিং এই বিষয়ে নিজেদের দায় এড়িয়েছে এবং বলেছে, তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই।
তবে পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ভারতের সঙ্গে চিনের ১২৭.৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ও পাকিস্তানে ৬৮ বিলিয়ন ডলারের সিপিইসি বিনিয়োগের কারণে চিন এখন যুদ্ধ নয়, স্থিতিশীলতা চায়।
সৌদি আরব ভারতের ঘনিষ্ঠ, কিন্তু শান্তির বার্তা দিচ্ছে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সৌদি সফরের সময়ে পহেলগাঁও হামলা হওয়ায় সফর সংক্ষিপ্ত করতে হয়। এর পরই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের হঠাৎ ভারত সফরে আসেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে সমর্থন করেন।
যদিও সৌদি আরব প্রকাশ্যে কোনও পক্ষ নেয়নি, কিন্তু ভারতের সঙ্গে তাদের বর্তমান কৌশলগত সম্পর্ক ও ৪৩ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অনেকটাই ভারতমুখী অবস্থানকে স্পষ্ট করছে।
নেপাল ভারতের পাশে
পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিক থাকায় নেপালের বিদেশমন্ত্রক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে: 'নেপাল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে তার মাটি ব্যবহারে অনুমতি দেবে না।' ভারতের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে নেপালের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রীও প্রকাশ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মধ্যপন্থী সতর্ক বার্তা
ভারত সফররত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স হামলার জন্য পাকিস্তানকে আংশিকভাবে দায়ী করেন, কিন্তু পরিষ্কারভাবে জানান, “আমেরিকা কোনো পক্ষ নেবে না, তবে কূটনৈতিকভাবে সমাধানের আহ্বান জানাবে।” মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক দৃঢ় হলেও, হস্তক্ষেপ না করার এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক নীতিরই অংশ।
ইরান এখনও নিরপেক্ষ, তবে নজরে রয়েছে
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে অতীতে কাশ্মীর ইস্যুতে তারা দ্ব্যর্থহীনভাবে কোনো পক্ষ নেয়নি। ইরান সাধারণত পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা ও শিয়া-সুন্নি সংঘাত নিয়ে বেশি সতর্ক থাকে, তাই তারা সরাসরি পাকিস্তানকে সমর্থন না করে, সাধারণত মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের আহ্বান জানায়।