এবার ভারতেই তৈরি হবে জেট ইঞ্জিন, যা ভারতের যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করা হবে। শুক্রবার এই ঘোষণা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি জানিয়েছেন যে ভারত এখন পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি, এই বিমানগুলির ইঞ্জিনো ভারতেই তৈরি করা হবে। এই কাজটি ফরাসি কোম্পানি সাফরানের সহযোগিতায় করা হবে। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে এই গোপন চুক্তির আওতায় আগামী ১০ বছরে ১২০ KN শক্তিসম্পন্ন একটি পরবর্তী প্রজন্মের ইঞ্জিন তৈরি করা হবে। এর পর, ব্যাপক উৎপাদন শুরু হবে। এই ঘোষণা ভারতের আত্মনির্ভর ভারত এবং মেক ইন ইন্ডিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। এছাড়াও আমেরিকার প্রতি একটি উপযুক্ত জবাবও। কারণ তারা তেজসের ইঞ্জিন সরবরাহে দেরি করেছে। এছাড়াও, শুল্ক বিরোধও চলছে দুই দেশের মধ্যে।
পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান আধুনিক যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে উন্নত বিমান। তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল...
স্টিলথ প্রযুক্তি: এই বিমানগুলি শত্রুর রাডার থেকে বাঁচতে পারে, কারণ তাদের নকশা এবং উপাদান রাডার সিগনাল হ্রাস করে।
সুপারক্রুজ: তারা আফটারবার্নার ছাড়াই সুপারসনিক গতিতে (শব্দের চেয়ে দ্রুত) উড়তে পারে।
সেন্সর ফিউশন: তারা একাধিক সেন্সর থেকে তথ্য একত্রিত করে পাইলটকে আরও ভাল নজরদারি এবং টার্গেট করার ক্ষমতা দেয়।
অভ্যন্তরীণ অস্ত্র: অস্ত্রগুলি বিমানের ভিতরে রাখা হয়, যা স্টিলথ বৃদ্ধি করে।
উন্নত এভিওনিক্স: এই বিমানগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক যুদ্ধ ব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত। ভারতের অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (AMCA) এমনই একটি বিমান হবে, যা আকাশে আধিপত্য বিস্তার করতে এবং গভীরভাবে আঘাত করতে সক্ষম। এটি ২৫ টন ওজন এবং দুটি ইঞ্জিনের নকশা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।
Saffron-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব
কেন এটি বিশেষ?
ভারত AMCA-এর জন্য ইঞ্জিন তৈরির জন্য ফরাসি সংস্থা Saffron কোম্পানিকে বেছে নিয়েছে। Saffron রাফাল যুদ্ধবিমানের জন্য M88 ইঞ্জিন তৈরি করে, যা ভারতীয় বিমানবাহিনী ইতিমধ্যেই ব্যবহার করে আসছে।
এই অংশীদারিত্বের উল্লেখযোগ্য দিক
১২০ কিলো নিউটন (kN) ইঞ্জিন: এই নতুন ইঞ্জিনটি AMCA-এর Mk-2 ভেরিয়েন্টকে লাগানো হবে। যা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিনগুলির মধ্যে একটি হবে।
১০০% প্রযুক্তি হস্তান্তর (ToT): Saffron ইঞ্জিন ডিজাইন, উন্নয়ন এবং উৎপাদনের সম্পূর্ণ প্রযুক্তি ভারতকে দেবে।
দেশীয় উৎপাদন: এই ইঞ্জিনটি ভারতেই তৈরি করা হবে, যা মেক ইন ইন্ডিয়াকে উৎসাহিত করবে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প: ইঞ্জিন তৈরি করতে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এটি DRDO এবং এর গ্যাস টারবাইন রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট (GTRE) ল্যাবের সহযোগিতায় তৈরি করা হবে।
অ্যারোস্পেস ইকোসিস্টেম: Saffron ভারতে একটি সম্পূর্ণ ইঞ্জিন উৎপাদন ইকোসিস্টেম তৈরির প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে সাপ্লাই চেন এবং রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন যে আমরা ফরাসি কোম্পানি Saffron-এর সঙ্গে ভারতে ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এটি ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার করবে।
AMCA: অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) হবে ভারতের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, যা অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA) এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলির সহযোগিতায় তৈরি করা হচ্ছে।
AMCA Mk-1: প্রাথমিক মডেলটিতে GE-414 ইঞ্জিন (98 kN) ব্যবহার করা হবে, যা আমেরিকা থেকে নেওয়া হবে।
Mk-2: উন্নত মডেলটিতে Saffron-এর 120 kN ইঞ্জিন থাকবে, যা ভারতে তৈরি করা হবে।
উৎপাদন: ২০৩৫ সালের মধ্যে ৭টি স্কোয়াড্রন (১২৬টি বিমান) ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দেবে।
খরচ: প্রোটোটাইপ এবং ডিজাইনের জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকা গত বছর নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (CCS) অনুমোদন দিয়েছে।
ফিচার: স্টিলথ, সুপারক্রুজ, অভ্যন্তরীণ অস্ত্র এবং উন্নত সেন্সর। AMCA ভারতের বিমান শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং চিন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে কৌশলগত সুবিধা দেবে।
কেন দেশীয় ইঞ্জিন প্রয়োজন?
ভারত দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিমানের জন্য বিদেশি ইঞ্জিনের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ
কিন্তু বিদেশি ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্ব এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, GE-F404 ইঞ্জিন সরবরাহে ২ বছরের বিলম্ব Tejas Mk-1A এর উৎপাদনকে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এখন AMCA Mk1A ইউনিটগুলি GE-414 ইঞ্জিন দিয়ে উড়বে। তবে Mk-2 অর্থাৎ আপগ্রেড করা সংস্করণটি Safran এর ১২০ KN ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হবে।