ওয়াকফ আইন বিরোধী বিক্ষোভে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই ঘটনা নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে করে বাংলাদেশ। তাতে ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ঢাকার সেই দাবি কড়া ভাষায় প্রত্যাখ্যান করল নয়াদিল্লি। ভারত সরকার এই বাংলাদেশের দাবি 'অসত্য' বলে উল্লেখ করে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আদতে এটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন চলছে, তার থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা মাত্র।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি এক বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে মুর্শিদাবাদের হিংসায় মুসলমান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। ঘটনায় ৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন।
এর প্রেক্ষিতে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল বলেন, 'আমরা পশ্চিমবঙ্গের ঘটনাকে নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ সরকারের উচিত অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য ও নীতিশিক্ষা না দিয়ে বরং নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় মনযোগী হওয়া।'
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার রিপোর্ট কারও অজানা নয়। গত বছর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই এই বিষয়টি বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে। কট্টর ইসলামপন্থীদের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০টি মন্দিরে ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।
ভারত বিভিন্ন কূটনৈতিক স্তরে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের উপর নির্দিষ্টভাবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে, তবুও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি, যেমন পূজা উৎসব চলাকালীন মন্দির ভাঙচুর, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির কড়া সমালোচনার মুখে ফেলেছে সরকারকে।
এদিকে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলায় ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের দেওয়া দান সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর কথা বলে। সেই প্রতিবাদ থেকেই শুরু হয় হিংসা, যা একাধিক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনে।
ঘটনার তদন্ত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে—এই হিংসায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এতে করে তৃণমূল সরকার ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও বেড়েছে।
এই প্রসঙ্গ ঘিরে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তবে ভারত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে—সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উপদেশ দেওয়ার আগে বাংলাদেশ সরকারের উচিত নিজেদের অবস্থান নিয়ে আত্মসমালোচনা করা।