শনিবার ঘোষণা হতে চলেছে ২০২৪ সালের ভোটের নির্ঘণ্ট। নরেন্দ্র মোদী সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরতে চলেছে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা। নরেন্দ্র মোদী কি হ্যাটট্রিক করবেন? এই প্রশ্নে ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভের মঞ্চে চিদম্বরম মনে করিয়ে দেন, ২০০৪ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী শাইনিং ইন্ডিয়া কর্মসূচি চালিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারে ফিরতে পারেননি। কংগ্রেস ৮টি আসন বেশি পেয়েছিল। কোনও কিছুই অবশ্যম্ভাবী, তা বলা যায় না। তবে মোদীর জয়ের নেপথ্যে উত্তর ভারতে 'হিন্দুত্ব-প্রীতি'কে কাঠগড়ায় তুলেছেন চিদম্বরম।
বেকারত্ব, গরিবি নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ করছে কংগ্রেস। কিন্তু তা সত্ত্বে মানুষ ভোট দিচ্ছে না। স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস দীর্ঘদিন সরকারে ছিল,দুর্নীতি, বেকারত্ব তাদের জমানাতেও ছিল, তাই কি মোদীর নেতৃত্বের উপর মানুষের ভরসা? এমন যুক্তি মানতে নারাজ চিদম্বরম। দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর অভিমত, বেকারত্ব ও দারিদ্র সত্ত্বেও হিন্দুত্বের কারণে মানুষ ভোট দিচ্ছে। কারণ মোদীকে হিন্দুদের রক্ষাকর্তা বলে মনে করছেন তাঁরা।'
কংগ্রেস কি লড়াইয়ে ফিরতে পারবে? এই প্রশ্নে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে ভাবনার ফারাকও তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন চিদম্বরম। তাঁর কথায়,'বিজেপি বেশি ভোট পাচ্ছে, এটা সত্যি। তাই তারা জিতছে। প্রশ্নটা হল, কংগ্রেস কি ফিরতে পারবে? আমার মনে হয়, তেলেঙ্গানা, কর্নাটকে আমরা জিতেছি। কিন্তু হিন্দুভাষী উত্তর ভারতে আমি কোনও পূর্বাভাস করতে চাই না। কারণ তারা রাম মন্দির নিয়ে উদ্বেল। আমি দক্ষিণ ভারত নিয়ে বলতে পারি, বিশেষ করে তামিলনাড়ু নিয়ে। লোকেরা আমাদের ভোট দিচ্ছে না কারণ তারা কংগ্রেসের কোনও প্রতিশ্রুতির পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। ভোট দেওয়ার আগে হাজারটা বিষয় নিয়ে ভাবেন মানুষ'।
২০১৪ সালে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪টি আসন। ২০১৯ সালে তাদের ঝুলিতে গিয়েছিল ৫২টি। এবার কটা পাবে কংগ্রেস? চিদম্বরম বলেন,'অন্য রাজ্যে যাইনি। বলতে পারব না। তামিলনাড়ু ও পুডুচেরির ৪০টি আসনের মধ্যে গতবার ৩৯টি পেয়েছিলাম। সেটাই পাব এবার। ইন্ডিয়া শাইনিং ক্যাম্পেন চলছিল বাজপেয়ী জমানায়। তিনি ভালো মানুষ। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস তাদের ৮ আসনের ব্যবধানে হারিয়েছিল। কোনও কিছুই অবশ্যম্ভাবী নয়। হিন্দিভাষীর সেবারের মতো ভোট দিলে আমাদের হাতে থাকবে'।
চিদম্বরমের আশঙ্কা,'দুই তৃতীয়াংশ আসনে জিতলে নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্রের পথে হাঁটবে দেশ। আমাদের পস্তাতে হবে। মোদী তৃতীয়বার জিতলে সংবিধানের বিরাট সংশোধন হতে চলেছে। তামিলনাড়ু ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। এক দেশ এক ভোট হলে সেই সরকার টিকবে মাত্র ৩ বছর'।
নির্বাচনী বন্ড নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তা নিয়েও মুখ খুলেছেন চিদম্বরম। তাঁর কথায়,'আমি আগেই বলেছিলাম, এটা প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ব্যবস্থা।' বিকল্প ব্যবস্থা কী? চিদম্বরমের মতে, মাঠে ময়দানে আনা হোক নির্বাচনকে। প্রার্থীদের খরচ বাড়ানো হোক। ১৯৮৪ সালে গাড়ি ভাড়ার খরচ ছিল ৩০০ টাকা। এখন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। সরকারি ফান্ডিং দেওয়া হোক সব দলকে। এখন যে দল বেশি আসন পায় তারাই চাঁদা বেশি পায়, এটা স্বাভাবিক। যারা চাঁদা দেবে তারা নিজেদের হিসেবে দেবে। রাজনৈতিক দল সেটা নিজেদের বার্ষিক হিসেবপত্রে দেখাবে'।