মহাকুম্ভ ২০২৫-এ পদপিষ্টের মৃত্যু ও অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে বিরোধীদের নিশানার জবাব দিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মৃত্যুকুম্ভ' কটাক্ষে India Today Conclave 2025-এর মঞ্চে মমতার নাম না করে যোগী আদিত্যনাথের পাল্টা জবাব, অনেকে বলেছিল এটি মৃত্যুকুম্ভ। কিন্তু মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, এটি মৃত্যুঞ্জয় মহাকুম্ভ।
বিধানসভায় কী বলেছিলেন মমতা?
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মহাকুম্ভে চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'মহাকুম্ভ আমি না-ই বা বললাম! ওটা এখন মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুকূপের মতো। আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি। শ্রদ্ধা জানাই। পবিত্র গঙ্গা মাকে আমি সম্মান করি। কিন্তু পরিকল্পনা না করে এত হাইপ তুলে এত লোকের মৃত্যু! বললেন ৩০ জন। কথাটা কি সঠিক? কত মৃতদেহ ভাসিয়ে দিয়েছেন নদীতে? কত? হাজার হাজার!'
'মৃত্যুকুম্ভ' মন্তব্যে জবাব দিলেন যোগী আদিত্যনাথ
মমতার সেই আক্রমণের প্রসঙ্গে আজ অর্থাত্ শনিবার যোগী আদিত্যনাথ বললেন, 'দেখুন, আমরা এই ধরনের কটাক্ষ শুনেছি। উনি মৃত্যুকুম্ভ বলেছেন, আর দেশের সব সনাতন ধর্মের মানুষ প্রমাণ করেছেন, এটি মৃত্যুকুম্ভ নয়, মৃত্যুঞ্জয় মহাকুম্ভ। সব বিরোধীদের জনতা জবাব দিয়ে দিয়েছে। মহাকুম্ভ, গঙ্গা জল নিয়ে কটাক্ষ করা মানুষরা আজীবন মনে রাখবেন এবং আফশোস করবেন ভবিষ্যতে।' যোগী এদিন আরও দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মহাকুম্ভে প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। এই প্রথমবার দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্য থেকে প্রচুর ভক্ত এসেছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি থেকে ভক্তরা এসেছেন। যোগীর কথায়, 'কুম্ভ নিয়ে যাঁরা সেকুলারিস্ট ছিলেন, যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন এখানে বাছবিচার করা হয়। তাঁদের মুখ বন্ধ করতে পারেছি। যাঁরা নিন্দা করেছিলেন, তাঁদের পরিবারের কেউ না কেউ কুম্ভে অংশ নিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে সনাতন ধর্মের স্বরূপ অনুধাবন করেছেন। তাছাড়া এত লম্বা অনুষ্ঠানে কোনও চুরি-ডাকাতি কিংবা অন্য কোনও রকম টিজিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।'
প্রয়াগরাজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যোগী সরকার গোপন করেছে?
মৌনী অমাবস্যার রাতে প্রয়াগরাজে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যোগী সরকার গোপন করেছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিরোধীদের এই দাবির প্রেক্ষিতে যোগীর মন্তব্য, 'মৌনী অমাবস্যায় যা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যপূর্ণ। এটি ২৮ ও ২৯ তারিখ মধ্যরাতে হয়েছে। ঘটনা ঘটার পরেই ওই সময় মহাকুম্ভে প্রায় ৪ কোটি ভক্ত ছিলেন। ভোর ৪টে সময় থেকে আখড়ার অমৃত স্নান শুরু হত। এছাড়া প্রয়াগরাজে ঢোকার আলাদা আলাদা রুটে ভিড় ছিল। আমরা সব রুটে মানুষকে আটকে ছিলাম। আমরা তাঁদের পরিবহণের ব্যবস্থা করেছি, যাতে তাঁরা নিরাপদে থাকেন। খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ২৪ ঘণ্টা ধরে ৮ কোটি মানুষের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছি। একটি দায়িত্ববান সরকার হিসেবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব, দুর্ঘটনায় সব আহতদের আগে গ্রিন কোরিডোর করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। ১৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে চিকিত্সা শুরু করা। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পরে কোনও রকম ভাঙচুর হয়নি, তার জন্য জনতার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ৬৫ জন আহত ছিলেন। তার মধ্যে ৩০ জনের মৃত্যু হয়। তাদের পরিজনদের হাতে দেহ তুলে দিয়েছি। একটি দেহের পরিয় জানা যাচ্ছিল না, সেই দেহেরও ডিএনএ টেস্ট করে আমাদের সরকার সম্মানের সঙ্গে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছি। আসলে আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল, ৮ কোটি মানুষকে সুরক্ষিত রাখা। কারণ ওই দিন অমৃতস্নান ছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল, আগে ভক্তরা শান্তিতে স্নান করে নিক।'