
দেশজুড়ে পরের পর ফ্লাইট বাতিল। যেগুলি ছাড়ছে, সেগুলিরও সময়ের কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। কার্যত ধসে পড়েছে ইন্ডিগোর ফ্লাইট শিডিউল। গন্তব্য পৌঁছতে না পেরে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন যাত্রীরা। এই পরিস্থিতির সঙ্গে কলকাতা মেট্রোর সাম্প্রতিক বেহাল পরিষেবার মিল পাচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু আচমকা এমন দশা গেল উড়ান সংস্থার? গলদ কোথায়?
ভোগান্তি
সারা দেশে প্রতিদিন ২২০০ ফ্লাইট অপারেট করে ইন্ডিগোর। এর মাত্র ৩৫% অন টাইম চলেছে বুধবার। কলকাতা থেকেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল হয়েছে ৯টি ডিপারচার এবং ৬টি অ্যারাইভাল ফ্লাইট। কলকাতা থেকেই দেরিতে ছেড়েছে ইন্ডিগোর ৮৫টি ফ্লাইট। দেরিতে নেমেছে ৪৯টি।
দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ মিলিয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ইন্ডিগোর ২০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আগামী খবর না দিয়ে বিভিন্ন ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় এয়ারপোর্টে পৌঁছে ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
সমস্যা কোথায়?
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ডিরেক্টরেট অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA) পাইলট ও কেবিন ক্রুদের ডিউটি নিয়ে কিছু পরিবর্তন এনেছে। পাইলট ও এয়ারহস্টেসদের বেশি করে বিশ্রাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম লাগু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। নতুন সেই নিয়মের বেড়াজালে পড়েই, স্রেফ পাইলট ও এয়ারহস্টেসদের অভাবের কারণে উড়ান পরিষেবায় সমস্যা তৈরি হয়েছে ইন্ডিগোতে। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। বুধবার বিবৃতি দিয়ে একপ্রকার স্বীকারও করে নিয়েছে ইন্ডিগো।
প্রশ্ন উঠছে, এই নিয়মের প্রভাব কেবলমাত্র ইন্ডিগোতেই পড়ল কেন? অন্য উড়ান সংস্থায় সমস্যা হচ্ছে না? মনে করা হচ্ছে, অতিরিক্ত অভিজ্ঞ পাইলট ও এয়ারহস্টেস রয়েছে স্পাইসজেট, এয়ার ইন্ডিয়া কিংবা আকাশার। ফলত প্ল্যানিংয়ের অভাবের কারণেই ধসে পড়েছে ইন্ডিগোর পরিষেবা। যদিও DGCA-র নয়া এই নিয়ম লাগু হয়েছে কেবলমাত্র নাইট ফ্লাইটে। আগে প্রতিটি নাইট ফ্লাইটে পাইলট সর্বাধিক ছ’টি ল্যান্ডিং করতে পারতেন। নতুন নিয়মে দু’টির বেশি ল্যান্ডিং করতে পারবেন না।
ইন্ডিগোর সাফাই
বুধবার ইন্ডিগো তার বিবৃতিতে জানিয়েছে, কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি, শীতকালীন উড়ানসূচিতে কিছু পরিবর্তন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এই অবস্থা। এটা আগে থেকে অনুমান করা যায়নি। তবে এই বেহাল পরিষেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন DGCA ইতিমধ্যেই ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষকে বৈঠকে ডেকেছে।
দেখা যাচ্ছে, ফ্লাইটের জন্য পাইলট পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু ফ্লাইটে কেবিন ক্রু নেই। কোথাও আবার অন্য শহর থেকে কেবিন ক্রু ও পাইলটদের উড়িয়ে এনে ফ্লাইট চালানো হচ্ছে। তাই, অনেক ক্ষেত্রেই ডাইরেক্ট ফ্লাইট অন্য শহর ঘুরে যাচ্ছে। ইন্ডিগোর দাবি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা পরিস্থিতি সামলে নিতে পারবে। বাড়ি থেকে এয়ারপোর্টে রওনা হওয়ার আগে ফ্লাইট স্টেটাস চেক করে বেরনোর পরামর্শ দিয়েছে এই উড়ান সংস্থা। ফ্লাইট ক্যানসেল হলে যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। নয়তো যাত্রী চাইলে পরের ফ্লাইটে পাঠানো হচ্ছে। এয়ারপোর্টে ইন্ডিগোর কাউন্টারের সামনে তাই যাত্রীদের ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সমালোচনার ঝড়।