হাতে বাঁধা রয়েছে বেড়ি। পায়ে রয়েছে শিকল। অবৈধ ভারতীয়দের ঠিক এভাবেই বিমানে ফেরত পাঠিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যে ঘটনার পর কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করল বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি মোদী উজ্জ্বল করেছেন বলে দাবি করলেও তা কতটা অন্তঃসারশূন্য, এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেল। রাজ্যসভায় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সরকারের অবস্থান তুলে ধরলেন। তাঁর দাবি, এটা নতুন কিছু নয়। আগেও অবৈধ ভারতীয়দের ফেরত পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয়দের বহিষ্কারের বিষয়টি লঘু করার চেষ্টা করেছেন জয়শঙ্কর। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নির্বাসন সংক্রান্ত কনভেনশনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন,'অবৈধ অভিবাসীরা সেখানে কঠিন পরিস্থিতিতে আটকে ছিলেন। তাঁদের ফেরত নিতেই হত'। এই ধরনের বিতারণ নতুন কিছু নয় বলে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পরিসংখ্যানও উদ্ধৃত করেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়,'প্রতি বছর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়। আমেরিকান নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এটাই প্রথমবার নয় যে মানুষকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই নিয়ম ২০১২ সাল থেকে রয়েছে'।
জয়শঙ্করের ১০ বড় কথা-
১. আমেরিকা থেকে ১০৪ জন ভারতীয়কে বহিষ্কার: বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাজ্যসভায় জানান, 'মোট ১০৪ জন ভারতীয়কে বহিষ্কার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র'।
২. অবৈধ অভিবাসন বন্ধে জোর: জয়শঙ্কর বলেন,'বিদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া সকল দেশের দায়িত্ব।
৩. বহিষ্কার প্রক্রিয়া নতুন নয়: বিদেশমন্ত্রী স্পষ্ট করেন, 'আমেরিকা থেকে ভারতীয়দের নির্বাসন প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে চলছে। এটা নতুন কিছু নয়'।
৪. নারী ও শিশুদের উপর কোনও বিধিনিষেধ নেই: মার্কিন সংস্থা আইসিই (ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ভারতকে জানিয়েছে যে নির্বাসনের সময় নারী ও শিশুদের আটকে রাখা হয়নি।
৫. বিমানে SOP অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপ: ২০১২ সাল থেকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) অনুযায়ী, বহিষ্কার করা ব্যক্তিদের বিমানে নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ মানতে হয়।
৬. টয়লেট বিরতি- জয়শঙ্কর জানান,'যাত্রীরা শৌচালয়ে যাওয়ার সময় নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
৭. নির্বাসিত ভারতীয়দের অভিজ্ঞতা: ফিরে আসা ভারতীয়রা নির্বাসনের সময় যে কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন, তা জানিয়েছেন।
৮. মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা: জয়শঙ্কর বলেন,'ভারত সরকার ক্রমাগত মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে যাতে অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার করা না হয়'।
৯. মানব পাচার বন্ধে এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা- অবৈধ উপায়ে বিদেশে মানুষ পাঠায় এমন এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন জয়শঙ্কর।
১০. অবৈধ অভিবাসন নয়- 'অবৈধ অভিবাসন কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না'। স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়শঙ্কর।
প্রিয়াঙ্কার তোপ
কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, 'অনেকে বড় বড় কথা বলা হয়েছিল যে মোদী আর ট্রাম্প খুব ভালো বন্ধু। তাহলে মোদীজি কেন এটা হতে দিলেন? হাতকড়া এবং পায়ে শিকল পরিয়ে কি বহিষ্কার করা উচিত? এটা কি কোনও পদ্ধতি? প্রধানমন্ত্রীর জবাব দেওয়া উচিত'।
উত্তাল রাজ্যসভা ও লোকসভার অধিবেশন
বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেভাবে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হট্টগোল শুরু করেন বিরোধী সাংসদরা। এ দিন লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ওয়েলে নেমে আসেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। স্পিকার ওম বিড়লা জানান, এটা বিদেশ নীতির অংশ। এটা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। স্পিকারের অনুরোধ সত্ত্বেও, বিরোধী সদস্যরা ওয়েলে স্লোগান দিতে থাকেন। হট্টগোলের কারণে স্পিকার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন।
রাজ্যসভাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয়দের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি তোলে বিরোধী দল। রাজ্যসভায় এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং এবং কংগ্রেসের রেণুকা চৌধুরী মুলতবি প্রস্তাব দেন। ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ তা গ্রহণ করেননি। এর পর বিরোধী সাংসদরা হট্টগোল শুরু করেন। হট্টগোলের কারণে রাজ্যসভার অধিবেশন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।হয়েছে। পরে সরকারের তরফে জানানো হয়, দুপুর দুটো নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয়দের ফেরানোর বিষয়টি নিতে বিবৃতি দেবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।