চিন ও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও জামায়াতে ইসলামী (জেআইবি)-র সঙ্গে চিনের বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।
জামায়াতে ইসলামী একটি বিতর্কিত ইসলামিক রাজনৈতিক দল, যা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির অনেক নেতা অভিযুক্ত হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, যা ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
চিন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল চিনের এই প্রভাবকে আরও জোরালো করেছে। বিশেষ করে, চিনের রাষ্ট্রদূতের জামায়াতে ইসলামী কার্যালয়ে পরিদর্শন এবং তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ভারতের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
জামায়াতে ইসলামীর প্রধান শফিকুর রহমান ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার কথা বললেও, তাদের ইসলামিক মতাদর্শ এবং শরিয়া আইন প্রয়োগের আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের জন্য ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হতে পারে। চিনযদি জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ায়, তবে তা বাংলাদেশে ভারতীয় প্রভাব হ্রাস করতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
এর পাশাপাশি, চিনের বিনিয়োগ ও প্রকল্পগুলো বাংলাদেশে চিনের প্রভাবকে আরও সুসংহত করছে। নতুন সরকারের অধীনে এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হতে পারে, যা ভারতের আঞ্চলিক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
অতএব, চিনও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই সম্পর্ক ভারতের জন্য এক বিশাল কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের উচিত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং কূটনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করা, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় তার স্থিতিশীলতা ও প্রভাব অক্ষুণ্ণ থাকে।