ওয়াকফ আইন নিয়ে দেশের অনেক রাজ্যেই বিক্ষোভ সমাবেশ, মিটিং মিছিল হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলাতেও এনিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে বিক্ষোভ থেকে হিংসা ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদে। এই জেলায় সামশেরগঞ্জ, জলঙ্গি, সুতি, ধুলিয়ানে হিংসা ব্যাপাক আকার নিয়েছিল। বাড়ি ঘরে আগুন লাগানো হয়েছে, পুলিশের গাড়ি ও অন্য লোকজনের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। হিংসায় এখনও পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রথম থেকেই সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে আসছে মুসলিম সংগঠন জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ। এবার সেই সংগঠনের প্রধান মাহমুদ মাদানি মুর্শিদাবাদে হিংসা নিয়ে প্রশ্নে মেজাজ হারালেন।
রবিবার জমিয়েত উলেমা-ই হিন্দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করে। মাওলানা মাহমুদ মাদানির সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়। বৈঠকে ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করার আইনি ও সাংবিধানিক উপায়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই বৈঠকে কমিটির ৪২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যারা বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
বৈঠকের পরে সংবাদমাধ্য়মের মুখোমুখি হন মাহমুদ মাদানি। সেখানে বাংলার মুর্শিদাবাদে হিংসা ও মৃত্যু নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন আজতকের সাংবাদিক। প্রশ্ন শুনেই মেজাজ হারান মাদানি। বলেন, 'মুর্শিদাবাদের ঘটনা নিয়ে আপনি আমাকে যে প্রশ্নটি করছেন, আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে মুর্শিদাবাদ কেন জ্বলছে? এর জন্যও কি আপনি মুসলমানদের দোষ দেবেন?'
মাওলানা মাহমুদ মাদানি বলেন, 'দেশে এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিজেপি এবং তার সমর্থকরা যে বার্তা দিয়েছে তা হল, যদি পুরনো ওয়াকফ আইন কার্যকর থাকত, তাহলে ওয়াকফ বোর্ড যা ইচ্ছা তাই করতে পারত। আগের ওয়াকফগুলিও এমন নিয়ম অনুসারে গঠিত হয়েছিল যেখানে মুসলিম সমাজের কোনও ভূমিকা ছিল না। যে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করেছিল, সেই সরকারই ওয়াকফ বোর্ড গঠন করেছিল। আগেও এমনটা হত এবং এখনও ঘটবে যে সরকার তার পছন্দের লোকদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করবে। যে দল ২০০৯ সাল পর্যন্ত বলত যে মুসলিমদের জমি দখল করা হয়েছে, তারা এখন আমাদের দখলদার বলছে। এটা ওয়াকফের বিষয় নয়, রাজনীতির বিষয়।' মাদানি জোর দিয়ে বলেন, 'এই বিষয়টি ওয়াকফ সম্পর্কিত নয় বরং মুসলিমদের অবমূল্যায়ন করার লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক কৌশল। বিলটি দেশ, জনগণ বা মুসলমানদের সর্বোত্তম স্বার্থে নয়, বরং নির্মাতাদের স্বার্থে। মুসলিম সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে ভারতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু এখন একটি নির্দিষ্ট আদর্শিক গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যারা প্রান্তিকদের পদদলিত করছে।'
বাংলায় ওয়াকফ আইন নিয়ে বিক্ষোভ হিংসায় পরিণত হওয়াতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে রাজ্যে ওয়াকফ সংশোধনী আইন কার্যকর করা হবে না। নতুন আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হুগলি জেলায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ভ্যান সহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। পুলিশকে পাথর ছোঁড়া হয় এবং রাস্তা অবরোধ করা হয়। মুর্শিদাবাদে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পালিয়ে এসে মালদার পারলালপুর এলাকার একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৫০০ জন মানুষ। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।