মানুষের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রকৃতির রোষের শিকার উত্তরাখণ্ডের একটি আস্ত পাহাড়ি শহর জোশীমঠ (Joshimath Sinking)। গোটা শহরজুড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল। একের পর এক বাড়িতে ফাটল বড় হচ্ছে। গোটা শহরটাই ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে মাটিতে। যার নির্যাস, আজ অর্থাত্ মঙ্গলবার জোশীমঠ (Joshimath) শহরের সব ফাটল ধরা বাড়ি ভেঙে ফেলা শুরু করছে সরকার।
দুটি হোটেল ভাঙা শুরু হল
ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়ায় প্রথম পর্যায়ে জোশীমঠের দুটি বিলাসবহুল হোটেল মাউন্ট ভিউ ও মাল্লারি ইন ভাঙা হবে। সবচেয়ে বেশি ফাটল ওই দুটি হোটেলেই। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ শুরু করে দিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। আশপাশের এলাকায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে পুলিশ।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্য সচিব এসএস সান্দু বিপজ্জনক নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ জারি করেছেন। ভূবিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে ভাঙার কাজ চলবে বলেও জানান তিনি।
তীব্র শীতে ঘর ছাড়ছেন পরিবারগুলি
জোশীমঠে প্রতিদিন একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরছে। এই তীব্র শীতে নিজের বাড়ি ছেড়ে ভয়ে রাস্তায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে পরিবারগুলি। তাঁদের সরকারি শেল্টারে আপাতত আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। জোশীমঠ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বহুগুনা নগরেও একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরা পড়েছে।
৬৭৮টি নির্মাণে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। আরও ২৭টি পরিবারকে সরানো হয়েছে নিরাপদ স্থানে। চামোলিতে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৮২টি পরিবারকে সরকার শেল্টারে সরানো হয়েছে। ২০০টি বাড়িকে বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবারগুলিকে বলা হয়েছে, কোথাও বাড়ি ভাড়া নিতে। আগামী ৬ মাস তাঁদের জন্য ৪ হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া বাবদ দেবে রাজ্য সরকার।
মাটির নীচে জল ভাণ্ডার কমেই বিপত্তি?
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় ৬ হাজার ফুট উঁচুতে হিমালয়ের কোলে শহর জোশীমঠ। উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল পাহাড়ের কোলে ছোট জনপদ। ১৯৩৯-এ প্রথম বার এই জনপদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ওঠে। তার পর কেটে গিয়েছে ৮৪ বছর।
২০০৯-এর ২৪ ডিসেম্বর জোশীমঠের কাছেই এক পাহাড়ের পেটে আচমকা থমকে যায় একটি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার যন্ত্র। কারণ, সামনে হাজার হাজার গ্যালন জল। মাসের পর মাস কেটে গেলেও জলের স্রোত কমেনি। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, মানুষের তৈরি যন্ত্র প্রকৃতির তৈরি একটি বিরাট জলভাণ্ডারে ছিদ্র করে দিয়েছে। সেই ছিদ্র দিয়ে বেরোচ্ছে হাজার হাজার গ্যালন জল। একটি হিসাব অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় ধরে দৈনিক ৬ থেকে ৭ কোটি লিটার জল সেখান দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। একটা সময় নিঃশেষ হয়ে যায় সেই বিপুল জলভাণ্ডার। এর ফলে এলাকার যত ছোটখাটো ঝর্না ছিল, সবই যায় শুকিয়ে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই বিপুল জলভাণ্ডার শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে এলাকার মাটি শুকিয়ে যায়। তা হয়ে যায় ঝুরঝুরে, ফাঁপা। ফলে পাহাড় ভাঙার ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে থাকা জোশীমঠের ধ্বংস সময়ের অপেক্ষা।